পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তার ইচ্ছায় কর্ম (t(tఏ আপনি শুকাইয়া যায়। পূত্রের সেই জ্ঞানের শিকড়টা কাটিতেই আর বেশি কিছু করিতে হয় নাই ; তার পর হইতে তার মাথাটা আপনিই চুইয়া পড়িয়া ব্রাহ্মণের পদরজে আসিয়া ঠেকিয়া রছিল। ইংরেজ আমাদের জ্ঞানের দ্বার বন্ধ করে নাই, অথচ সেইটেই মুক্তির সিংহদ্বার। রাজপুরুষের সেজন্য বোধ করি মনে মনে আপসোস করেন এবং আস্তে আস্তে বিদ্যালয়ের দুটো-একটা জানলাদরজাও বন্ধ করিবার গতিক দেখি,—কিন্তু তবু একথা তার কোনোদিন একেবারে ভুলিতে পারিবেন না যে, সুবিধার খাতিরে নিজের মকুন্যত্বকে আঘাত করিলে ফলে সেটা আত্মহত্যার মতোই হয়। ভারতশাসনে আমাদের স্তাষ্য অধিকারটা ইংরেজের মনস্তত্বের মধ্যেই নিহিত—এই আশার কথাটাকে যদি আমাদের শক্তি দিয়া ধরিতে পারি তবে ইহার জন্য বিস্তর দুঃখ সহা, ত্যাগ করা, আমাদের পক্ষে সহজ হয়। যদি আমাদের দুর্বল অভ্যাসে বলিয়া বসি, কর্তার ইচ্ছা কর্ম, ওর আর নড়চড় নাই, তবে যে সুগভীর নৈরাপ্ত আসে, তার দুই রকমের প্রকাশ দেখিতে পাই—হয় গোপনে চক্রাস্ত করিয়া, আকস্মিক উপন্দ্রবের বিস্তার করিতে থাকি, নয় ঘরের কোণে বসিয়া পরস্পরের কানে-কানে বলি, অমুক লাটসাহেব ভালো কিম্বা মন্দ, অমুক ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় সচিব থাকিতে আমাদের কল্যাণ নাই, মলি সাহেব ভারতসচিব হইলে হয়তো আমাদের মুদিন হইবে, নয়তো আমাদের ভাগ্যে এই বিড়াল বনে গিয়া বনবিড়াল হইয়া উঠিবে। অর্থাৎ নৈরাণ্ডে, হয় আমাদের মাটির তলার সুরঙ্গের মধ্যে ঠেলিয়া শক্তির বিকার ঘটায়, নয় গৃহকোণের বৈঠকে বসাইয়া শক্তির ব্যর্থতা স্বষ্টি করে ; হয় উন্মাদ করিয়া তোলে, নয় হাবা করিয়া রাখে। কিন্তু মচুন্যত্বকে অবিশ্বাস করিব না ; এমন জোরের সঙ্গে চলিব, যেন ইংরেজরাষ্ট্রনীতির মধ্যে কেবল শক্তিই সত্য নহে, নীতি তার চেয়ে বড়ো সত্য। প্রতিদিন তার বিরুদ্ধত দেখিব ; দেখিব স্বার্থপরতা, ক্ষমতাপ্রিয়তা, লোভ, ক্রোধ, ভয় ও অহংকার সমস্তরই লীলা চলিতেছে ; কিন্তু মানুষের এই রিপুগুলো সেইখানেই আমাদের মারে যেখানে আমাদের অন্তরেও রিপু আছে, যেখানে আমরাও ক্ষুদ্র ভয়ে ভীত, ক্ষুদ্র লোভে লুব্ধ, যেখানে আমাদের পরম্পরের প্রতি ঈর্ষা বিদ্বেষ অবিশ্বাস । যেখানে আমরা বড়ো, আমরা বীর, আমরা ত্যাগী তপস্বী শ্রদ্ধাবান, সেখানে অন্তপক্ষে যাহা মহৎ তার সঙ্গে আমাদের সত্য যোগ হয় ; সেখানে অন্ত পক্ষের রিপুর মার খাইয়াও তবু আমরা জয়ী হই, বাহিরে না হইলেও অস্তরে। আমরা যদি ভিতু হই, ছোটো হই, তবে ইংরেজগবর্মেন্টের নীতিকে খাটো করিয়া তার রিপুটাকেই প্রবল করিব । যেখানে দুই পক্ষ লইয়। কারবার সেখানে দুই পক্ষের শক্তির যোগেই শক্তির উৎকর্ষ, দুই পক্ষের দুর্বলতার যোগে চরম দুর্বলতা। অব্রাহ্মণ যখনই জোড়হাতে অধিকারহীনতা মানিয়া লইল,