পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তার ইচ্ছায় কর্ম &\9& তিনি মহাকালের রাজপথে চলিয়াছেন, রোগ তাপ বিপদ মৃত্যু কিছুতেই তাহাকে বাধা দিতে পারিল না, বিশ্বপ্রকৃতি বরমাল্যে র্তাহাকে বরণ করিয়া লইল, জ্ঞানের জ্যোতির্ময় তিলকে তার উচ্চললাট মহোজ্জল, অতিদূর ভবিষ্যতের শিখরচুড়া হইতে তার জন্য আগমনীর প্রভাত রাগিণী বাজিতেছে।" সেই ভূম আজ আমার মধ্যেও আপনার আসন খুজিতেছেন। ওরে অকাল-জরা-জর্জরিত, আত্ম অবিশ্বাসী ভীরু, অসত্যভারাবনত মূঢ়, আজ ঘরের লোকদের লইয়া ক্ষুদ্র ঈর্ষায় ক্ষুদ্র বিদ্বেষে কলহ করিবার দিন নয়, আজ তুচ্ছ আশা তুচ্ছ পদ্ধমানের জন্ত কাঙালের মতে কাড়াকড়ি করিবার সময় গেছে, আজ সেই মিথ্যা অহংকার দিয়া নিজেকে ভুলাইয়া রাখিব না, যে অহংকার কেবল আপন গৃহকোণের অন্ধকারেই লালিত হইয়া স্পর্ধা করে, বিরাট বিশ্বসভার সম্মুখে যাহা উপহসিত গজ্জিত। অন্তকে অপবাদ দিয়া আত্মপ্রসাদলাভের চেষ্টা অক্ষমের চিত্তবিনোদন, আমাদের তাহাতে কাজ নাই। যুগে যুগে আমাদের পুঞ্জ পুঞ্জ অপরাধ জমিয়া উঠিল, তাহার ভারে আমাদের পৌরুষ দলিত, আমাদের বিচারবুদ্ধি মুমূৰু —সেই বহু শতাব্দীর আবর্জন আজ সবলে সতেজে তিরস্কৃত করিবার দিন। সম্মুখে চলিবার প্রবলতম বাধা আমাদের পশ্চাতে ; আমাদের অতীত তাহার সম্মোহনবাণ দিয়া আমাদের ভবিষ্যৎকে আক্রমণ করিয়াছে ; তাহার ধূলিপুঞ্জে শুষ্কপত্রে সে আজিকার নূতন যুগের প্রভাতস্বর্ধকে স্নান করিল, নবনব অধ্যবসায়শীল আমাদের যৌবনধর্মকে অভিভূত করিয়া দিল, আজ নিৰ্মম বলে আমাদের সেই পিঠের দিকটাকে মুক্তি দিতে হইবে তবেই নিত্যসম্মুখগামী মহৎ মহন্তত্বের সহিত যোগ দিয়া আমরা অসীম ব্যর্থতার লজ্জা হইতে বাঁচিব, সেই মহস্তত্ব ষে মৃত্যুজয়ী, যে চিরজাগন্ধক চিরসন্ধানরত, যে বিশ্বকর্মর দক্ষিণ হস্ত, জ্ঞানজ্যোতিরালোকিত সত্যের পথে যে চিরযাত্রী, যুগযুগের নবনব তোরণদ্বারে যাহার জয়ধ্বনি উচ্ছ্বসিত হইয়া দেশদেশাস্তরে প্রতিধ্বনিত। বাহিরের দুঃখ শ্রাবণের ধারার মতো আমাদের মাথার উপর নিরস্তর বর্ধিত হইয়াছে, অহরহ এই দুঃখভোগের যে তামসিক অশুচিত, আজ তাহার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। তাহার প্রায়শ্চিত্ত কোথায় ? নিজের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় দুঃখকে বরণ করিয়া। সেই দুঃখই পবিত্র হোমারি,-সেই আগুনে পাপ পুড়িবে, মুঢ়তা বাষ্প হইয়া উড়িয়া মাইবে, জড়ত ছাই হইয়া মাটিতে মিশাইবে। এস প্রন্থ, তুমি দীনের প্রস্তু নও। আমাদেরমধ্যে ষে অীন, যে অমর, যে প্রভু, যে ঈশ্বর আছে, হে মহেশ্বর তুমি তাহারই প্রভু— ভাকে আজ তাহাকে তোমার রাজসিংহাসনের দক্ষিণপার্থে। - দীন লজ্জিত হউক, দাস লাঙ্কিত হউক, মূঢ় তিরস্থত হইয় চির-নির্বাসন গ্রহণ করুক। । ১২২৪