পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ দান না করলে এ কখনো সম্ভব হত না। এই যে আত্মদানমূলক সৃষ্টিশক্তি ও দৈবীশক্তি। আচার্যর এই শক্তির মহিমা জরাগ্রস্ত হবে না। তরুণের হৃদয়ে হৃদয়ে নবনবোন্মেষশালিনী বুদ্ধির মধ্য দিয়ে তা দূরকালে প্রসারিত হবে। দুঃসাধ্য অধ্যবসায়ে জয় করবে নব নব জ্ঞানের সম্পদ। আচার্যের নিজের জয়কীর্তি নিজে স্থাপন করেছেন উদ্যমশীল জীবনের ক্ষেত্রে, পাথর দিয়ে নয়--- প্রেম দিয়ে। আমরাও তার জয়ধ্বনি করি। প্রথম বয়সে তীর প্রতিভা বিদ্যাবিতানে মুকুলিত হয়েছিল; আজ তার সেই প্রতিভার প্রফুল্লতা নানা দলবিকাশ করে দেশের হৃদয়ের মধ্যে উদবারিত হল। সেই লোককান্ত প্ৰতিভা আজ অর্ঘ্যরূপে ভারতের বেদীমূলে নিবেদিত। ভারতবর্ষ তাকে গ্রহণ করেছেন, সে র্তার কণ্ঠমালায় ভূষণরূপে নিত্য হয়ে রইল। ভারতের আশীর্বাদের সঙ্গে আজ আমাদের সাধুবাদ মিলিত হয়ে তীর মাহাত্ম্য উদঘাষণা করুক। বিচিত্রা (?& Sws • আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় সাহিত্যের ভবিষ্যৎ নামক প্রবন্ধে আশুতোষ ভারতব্যাপী বিশাল ভূমিকায় তীর মনের সর্বোচ্চ কামনার ও সাধনার যে চিত্র এঁকেছেন তাতে এই কৰ্মবীরের ধ্যানের মহত্ত্ব আমি সুস্পষ্টরূপে অনুভব করেছি। তার বলিষ্ঠ প্রকৃতি শিক্ষানিকেতনে দূরূহ বাধার বিরুদ্ধে আপন সৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্র অনুভব করেছিল। এইখানে তিনি সমস্ত ভারতের চিত্তমুক্তি ও জ্ঞানসম্পদের ভিত্তিস্থাপন করতে প্ৰবৃত্ত ছিলেন। তার অসামান্য কৃতিত্ব ও উদার কল্পনাশক্তি সমস্ত দেশের ভবিষ্যৎকে ধ্রুব আশ্রয় দেবার অভিপ্ৰায়ে সেই বিদ্যানিকেতনের প্রসারীকৃত ভিত্তির উপর স্থায়ী কীর্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ করেছিল। এই প্রবন্ধে সেই তার মহতী ইচ্ছার সম্পূর্ণ স্বরূপটি দেখে সেই পরলোকগত মনস্বী পুরুষের কাছে শ্রদ্ধা নিবেদেন করি। • শ্যামকান্ত সর্দেশাই শ্যামকান্ত সর্দেশাই একদা শান্তিনিকেতন আশ্রমে প্রবেশ করেছিল অপ্রত্যাশিতভাবে, তখন আমাদের বিদ্যালয়ে অন্য প্রদেশের ছাত্র প্রায় কেউ ছিল না। কিন্তু সে যেমন সকল দিক থেকে আমাদের আশ্রমের সঙ্গে একীভূত হয়েছিল এমন অন্য কোনো ছাত্র আমরা দেখি নি। পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালোরূপ সিদ্ধিলাভ করবার উপযুক্ত মেধা আমাদের দেশের ছেলেদের মধ্যে দুলৰ্ভ নয়-— কিন্তু বোধশক্তিবান যে-চিত্তবৃত্তি বিদ্যাকে এবং চারি দিকের পরিকীর্ণ প্রভাবকে সমঞ্জসীভূত ক’রে সজীব সত্তায় পরিণত করতে পারে তা অল্পই দেখা যায়। সেই শক্তি ছিল শ্যামকান্তের, তাই সে আমাদের অত্যন্ত আপন হয়ে উঠেছিল— কিছুই তার কাছে বিদেশি ছিল না। সে আমাদের আশ্রমকে হৃদয়ে গ্রহণ করেছিল, জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, এবং সে অধিকার করেছিল আমাদের হৃদয়। আমরা তাকে সকলেই ভালোবেসেছিলুম। তার সময়কার এমন কোনো ছাত্র আমাদের ওখানে ছিল না, বাংলা ভাষার অধিকারে যে তার সমকক্ষ ছিল। তা ছাড়া আমাদের সংগীতে তার অনুরাগ এবং প্রবেশ ছিল স্বাভাবিক। এই দুই পথ দিয়েই তার মন আমাদের আশ্রমে আদর্শে ও জীবনযাত্রায় নিজেকে সহজেই বিস্তারিত করতে পেরেছিল। দূর গৃহ থেকে এসেছিল শ্যামকান্ত, কিন্তু আপনি হৃদয়মনের শক্তিতে সে আমাদের একান্ত নিকটস্থ হয়েছিল, এবং এখনো নিকটেই আছে। ইতি ১১ জুন ১৯৩৩ [১৩৪০]


.--۔۔۔۔۔۔۔۔۔بی۔سی۔سی۔ ع;""?-- ” ”