পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2 >O○ জুড়ে এই প্রেম নিয়তই সৃষ্টির কাজ করে চলেছে। কেবল শক্তি দান করে সৃষ্টি হয় না, আত্মা আপনাকে দান করার দ্বারাই সৃষ্টিকে চালনা করে। বেদে তাই ঈশ্বরকে বলেছেন, "আত্মদা বলদ” যেখানে আত্মা নেই। শুধু বল সেখানে প্ৰলয়। - আমি এই জানি আমাদের আশ্রমের কাজ পুনরাবৃত্তির কাজ নয়, নিরস্তর সৃষ্টির কাজ। এখানে তাই আত্মদানের দাবি রাখি। এই দানে সীমা নেই। এ দশটা-চারটের মধ্যে ঘোর-দেওয়া কাজ নয়। এ যন্ত্রচালনা নয়, এ অনুপ্ৰাণন। আজ শ্রাদ্ধের দিনে জগদানন্দের সেই আত্মদানের গৌরবকে স্বীকার করছি। এখানে তিনি র্তার কর্মের মধ্যে কেবল সিদ্ধি লাভ করেন নি অমৃত লাভ করেছেন। কেননা তিনি ভালোবেসেছেন আনন্দ পেয়েছেন। আপনার দানের দ্বারা উপলব্ধি করেছেন। আপনাকে । তাই আজ শ্ৰাদ্ধবাসরে যে পারলৌকিক কর্ম এটা তীর পরিবারিক কাজ নয় সমস্ত আশ্রমের কাজ। বেঁচে থেকে তিনি যে প্রতি আকর্ষণ করছিলেন তাকে স্মরণ করে তার পরলোকগত আত্মার প্রবাসী 5|函 >○8o মাতৃভূমিতে। মাতৃভূমি তোমার জন্য রচনা করে রেখেছে- জয়মাল নয়— আশীর্বাদপূত বরণমালা। বাংলার কবির হাত থেকে আজ তুমি তা গ্রহণ করো। আশ্রম থেকে তোমাকে বিদায় দেবার পূর্বে একটা কথা জানিয়ে রাখি। যে-কোনো বিদ্যা প্ৰণলোকের সৃষ্টি— যেমন নৃতাবিদ্যা- তার সমৃদ্ধি এবং সংবৃদ্ধির সীমা নাই। আদর্শের কোনো একটি প্রান্তে থেমে তাকে ভারতীয় বা প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য নামের দ্বারা চরম ভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা বিহিত নয়, কারণ সেই অস্তিমতায় মৃত্যু প্রমাণ করে। তুমি দেশবিদেশের নৃত্যরসিকদের কাছ থেকে প্রভৃতি সম্মান পেয়েছ, কিন্তু আমি জানি তুমি মনে মনে অনুভব করেছ যে, তোমার সামনে সাধনার পথ এখনো দূরে প্রসারিত, এখনো তোমাকে নুতন প্রেরণা পেতে হবে, উদ্ভাবন করতে হবে নব নব কল্পমূর্তি। আমাদের দেশে “নবনবােন্মেষশালিনী বুদ্ধিকেই প্রতিভা বলে। অতীত যুগের অনুবৃত্তিতে বা প্রাদেশিক অভ্যস্ত সংস্কারে জড়িত হয়ে থাকবে না। প্রতিভা কোনাে সীমাবদ্ধ সিদ্ধিতে সন্তুষ্ট থাকে না, অসন্তোষই তার জয়যাত্রাপথের সারথি । সেই পথে যে-সব তোরণ আছে তা থামবার জন্যে নয়, পেরিয়ে যাবার জন্যে। একদিন আমাদের দেশের চিত্তে নৃত্যের প্রবাহ ছিল উদবোেল। সেই উৎসের পথ কালক্রমে অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। অবসাদগ্ৰস্ত দেশে আনন্দের সেই ভাষা আজ স্তব্ধ। তার শুষ্ক শ্ৰোতঃপথে মাঝে মাঝে যেখানে তার অবশেষ আছে সে পঙ্কিল এবং ধারাবিহীন। তুমি এই নিরাশ্বাস দেশে নৃত্যকলাকে উদবাহিত করে আনন্দের এই বাণীকে আবার একবার জাগিয়ে তুলেছি। নৃত্যুহারা দেশ অনেক সময় এ কথা ভুলে যায় যে, নৃত্যকলা ভোগের উপকরণমাত্র নয়। মানবসমাজে নৃত্য সেইখানেই বেগবান, গতিশীল, সেইখানেই বিশুদ্ধ, যেখানে মানুষের বীর্য আছে। যে দেশে প্রণের ঐশ্বর্য অপর্যাপ্ত, নৃত্যে সেখানে শৌর্যের বাণী পাওয়া যায়। শ্রাবণমেঘে নৃত্যের রূপ। তড়িৎ-লতায়, তার নিত্যসহচর। বৰ্জাগ্নি। পৌরুষের দুৰ্গতি যেখানে ঘটে, সেখানে নৃত্য অন্তর্ধন করে, কিংবা বিলাস-ব্যবসায়ীদের হাতে কুহকে আবিষ্ট হয়ে তেজ হারায়, স্বাস্থ্য Sr by