পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

४६ δ. Σ (ζ থেকে থেকে শঙ্খ ঘণ্টা বাড়িয়ে শিবনেত্র হয়ে বলেছি আমরা আধ্যাত্মিক, আর যারা আমাদের কান মলে তারা বস্তুতান্ত্রিক। হই-না-কেন রোগে জীৰ্ণ, উপবাসে ক্ষীণ, অশিক্ষায় নিমগ্ন, ছোটাে বড়ো সকল প্রকার দুগ্রহের কাছে নিঃসহায়, তব ওদের মতো স্লেচ্ছ নই। আমরা ফোটা কাটি, মালা জপি, স্নানের যোগ এলে চারদিক থেকে হাজার হাজার লোকের আঁধি লেগে যায় স্বৰ্গলাভের লোভে, আর ওদের যত লোভ আর যত লাভ সবই এই মর্ত্যলোকের সীমানায়- ধিক। পিঠে মাের এসে পড়ে বাস্তবের দেশে আর চুন হলুদ লাগাতে যাই অবাস্তব লোকে। এমন সময় একটা যুগান্ত দেখা দিল বিনা ভূমিকায়। এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে মধ্য প্রভাতের অভু্যদয় হল। অনেকদিন অন্ধকারে থেকে আমরা কখনো ভাবতেই পারি নি যে, দিনরথের আবর্তন কোনোদিন আবার প্রাচ্যদিগন্তে পৌঁছতে পারে। আমরা একদিন অবাক বিস্ময়ে দেখলাম যে, দূরতম প্রাচ্যে ক্ষুদ্রতম জাপান তার প্রবল প্রতিপক্ষকে সহজেই পরাস্ত করে সভা সমাজের উচ্চ আসনে চড়ে বসল; প্রচণ্ড পাশ্চাত্য সভ্যতার ভাণ্ডারে যে শক্তি ও যে বিদ্যা পুঞ্জিত ছিল জাপান তা অধিকার করল অতি অল্প সময়ের মধ্যে। দীর্ঘ ইতিহাসের বন্ধুর পন্থায় ক্রমশ পুষ্ট, ক্রমশ ব্যাপ্ত, বহু চেষ্টায় নানা সংগ্রামে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমের অমোঘ বিজয় বীর্যকে আপন স্বাধীনতার সিংহদ্বার দিয়ে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে আবাহন করে আনলে। এ যে এত সহজে লভ্য এ কথা আমরা ভাবতে পারি নি। সবিস্ময়ে আশ্বস্ত হয়ে বুঝতে পারলেম, ব্যাপারটা দুরূহ নয়। যে যন্ত্রবিদ্যার জোরে মানুষ আত্মপোষণ ও আত্মরক্ষা করতে পারে সম্পূর্ণভাবে, সেটা আয়ত্ত করতে দীর্ঘকালের তপস্যা লাগে না। এমন-কি Conscription-এর সাহায্যে কুচকাওয়াজ করিয়ে বছর কয়েকের মধ্যে ভারতীয় জনসাধারণকে সৈনিক ব্যবসায়ে অভ্যস্ত করা নিশ্চয়ই সম্ভবপর। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে যাকে বলে শ্রেয়, তার পথ অন্ত7রর পথ, সেটা সহজ নয়। তার জনো প্রস্তুত হতে সময় লাগে, লড়াই করতে হয় নিজেরই সঙ্গে। মহাত্মজির নির্দেশ হল শ্রেয়োনীতির জোরেই স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে, বাহুবলের জোরে নয়। তার কথা যারা মেনে নিয়েছে তারা আত্মার শক্তি কামনা করছে। এই পথের সাধনা বিলম্বে সিদ্ধ হয়। এই অন্তরের রাস্তা ছাড়া একটা বাহিরের বড়ো রাস্তাও আছে, স্বতন্ত্রতার লক্ষ্য। সেটা অন্নের পথ, আরোগ্যের পথ, দৈন্যলাঘবের পথ। বিজ্ঞানের সাধনা এই পথে, সে জয়ী করে জীবনসংগ্রামে। সে পথে মানুষের শয়তানির বাধা নেই। এমন-কি সে দলে টেনে নেয় বিজ্ঞানকে, কিন্তু সেজন্যে বিজ্ঞানকে দোষ দেওয়া অন্যায়, কেননা বিজ্ঞানের স্বাভাবিক সম্বন্ধ বুদ্ধির সঙ্গে, শ্ৰেয়োনীতির সঙ্গে নয়। এখানে দোষ দিতে হয় সেই সকল ধর্মমতকে যে-সকল মত মানুষকে বিচারবর্জিত আচারকে চলার পথে বোঝা করে তোলে। শতাব্দীর অধিক কািল হল আমরা শক্তিশালী পাশ্চাত্য জাতির শাসন-শৃঙ্খলে বাধা আছি। কিন্তু যন্ত্রশক্তির এই চরম বিকাশের দিনেও এই বিংশ শতাব্দীতে আমরা উপবাসী, আমরা রোগজীর্ণ, দারিদ্রো আমরা সর্বতোভাবে পঙ্গ। যে-বিদ্যা অপমান ও দুৰ্গতি থেকে মানুষকে রক্ষা করে তার আমরা স্পর্শ পাই নি বললেই হয়। এই শিক্ষা জাপানের হয়েছে, আমাদের হয় নি যদিও বুদ্ধিতে আমরা জাপানির চেয়ে কম নই। চোখের সামনেই দেখছি, জাপান এমন প্রবল হয়ে উঠল যে, এই ক্ষুদ্র দ্বীপবাসীর কাছে যুরোপের গর্বািন্ধ জাতিদের অহংকার পদে পদে খর্ব হচ্ছে। পাশ্চাত্যের বিদ্যা আয়ত্ত করে শতাব্দীর অনতিকালের মধ্যে জাপান যখন এই গৌরব লাভ করলে, তখন আমাদের মনের দ্বারে একটা প্ৰবল আঘাত লাগল, জাগরণের জন্যে আহ্বান এল আমাদের অস্তরে। এশিয়ার পাশ্চাত্যতম ভূখণ্ডে দেখলুম তুর্কি— যাকে যুরোপে Sick-man oF Europe KG vK3 t-V, Ci কী রকম প্রবল শক্তিতে অসম্মানের বাঁধন ছিন্ন করে ফেলল। যুরোপের প্রতিকূল মনোবৃত্তির সামনে সে আপনার জয়ধ্বজ তুলে ধরলে। এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন দেশে এই আত্মগৌরব লাভের দৃষ্টান্ত দেখে আমাদের দুৰ্গতিগ্রস্ত ইতিহাসের আওতার