পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

δ Σ. \, রবীন্দ্র-রচনাবলী আবছায়ার ভিতরে একটা আশ্বাসের আলো প্ৰবেশ করল। মনে হচ্ছে অসাধ্যও সাধ্য হয়। স্বাধীনতার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত নয়— যা চাই, তা পাব। মূল্য দিতে হবে, সে মূল্য দেবার লোক উঠবে। এই যে এশিয়ার আকাশের উপরে তুর্কির বিজয়পতাকা উড়ছে, সেই পতাকাকে যিনি সকলরকম ঝড়ঝাপটের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছেন- সেই দূরদর্শী, বীর, সেই রাষ্ট্রনেতার পরলোকগত আত্মকে প্রগতিকাঙক্ষী আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি যে কেবল তুর্কিকেশক্তি দিয়েছেন তা তো নয়, সেই শক্তিরথের চক্রঘর্ঘর ভারতবর্ষের ভূমিকেও কঁপিয়ে তুলছে। একটা বাণী এসেছে তার কাছ থেকে, তিনি বুঝিয়েছেন যে, সংকল্পের দৃঢ়তার কাছে, বিরাট অধ্যবসায় ও অক্ষুঃ আশার কাছে, দুরূহতম বাধাও চিরস্থায়ী হতে পারে না। এই কামালপাশা একদিন নিৰ্ভয়ে দুর্গমপথে যাত্রা করেছিলেন। সেদিন তার সামনে পরাভাবের সমূহ সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সংকল্পকে তিনি কখনো বিচলিত হতে দেন নি। যুরোপের উদ্যত নখদন্তভীষণ সিংহকে তার গুহার মুখেই তিনি ঠেকিয়েছেন। এশিয়াকে এই হল তার দােন— এই উৎসাহী। র্তার জীবনী সম্বন্ধে সবা-কিছু জানা নেই, বলবার সময়ও নেই। কেবল এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, তুর্কিকে তিনি যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেইটেই সব চেয়ে বড়ো কথা নয়, তিনি তুর্কিকে তাঁর আত্মনিহিত বিপন্নতা থেকে মুক্ত করেছেন। মুসলমান ধর্মের প্রচণ্ড আবেগের আবর্তমধ্যে দাঁড়িয়ে, ধর্মের অন্ধতাকে প্রবলভাবে তিনি অস্বীকার করেছেন। যেঅন্ধতা ধর্মেরই সব চেয়ে বড়ো শত্ৰু, তাকে পরাভূত করে তিনি কী করে অক্ষত ছিলেন, আমরা আশ্চর্য হয়ে তাই ভাবি। তিনি যে বীরত্ব দেখিয়েছেন, সে বীরত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে দূর্লভ। বুদ্ধির গৌরবে: অন্ধতাকে দমন করা তার সব চাইতে বড়ো মহত্ত্ব, বড়ো দৃষ্টান্ত। আমরা অন্য সম্প্রদায়ের কথা বলতে চাই নে, বলা নিরাপদ নয়। নিজেদের দিকে যখন তােকই তখন মন নৈরাশ্যে অভিভূত হয়। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে যা বলবার তা বলেছেন স্বয়ং মুসলমানবীর কামালপাশা, বলেছেন পারসোর রেজা শা পহুবী। তুর্কিকে স্বাধীন করেছেন বলে নয়, মৃঢ়তা থেকে মুক্তির মন্ত্র দিয়েছেন বলেই কামালের অভাবে আজ সমগ্র এশিয়ার শোক। যে-হতভাগ্য জাতি তার মন্ত্র গ্রহণ করে নি, তার অবস্থা শোচনীয়। তিনি তুর্কিকে যে প্রাণশক্তি দিয়ে গেছেন, তার অবসান হয়তো হবে না। কিন্তু আমরা— হতভাগ্যের দল- এই এশিয়ায় কার দিকে তাকবি। জাপানের দিকে মুখ তোেলবার দিন আর আমাদের নেই। এখন এইমাত্র প্রত্যাশায় আমরা সাস্তুনা পাই যে, প্ৰাণে আঘাত পেয়েই চীনের প্রাণশক্তি দ্বিগুণ বলিষ্ঠ হয়ে জাপানকে পরাস্ত করবে। যদি সে পরাজিত হয় তবু সে পরাভূত হবে না। এত বড়ো জাত যদি জাগতে পারে, তবে সেই জাগরণের শক্তি ভারতকে প্রভাবান্বিত করবে। তাতে পরোক্ষভাবে ভারতেরই লাভ তোমরা প্ৰগতিপথের তরুণ যাত্রা আজ তোমাদের সম্মেলনের দিনে, সমস্ত এশিয়ার সম্মুখে যিনি প্রগতির পথ উদঘাটিত করেছেন, যার জয়গৌরবের ইতিহাসে সমস্ত এশিয়া মহাদেশের বিজয় সূচনা করছে সেই মহাবীর কামালের উদ্দেশে ভারতের নবযুগের অভিবাদন আমরা প্রেরণ করি। আনন্দবাজার পত্রিকা ৯ পৌষ ১৩৪৫ • কেশবচন্দ্ৰ সেন আমাদের দেশে আশীর্বাদ করে শতায় হও। সে আশীৰ্বাদ দৈবাৎ হয়তো কখনো ফলে কখনো ফলে না। কিন্তু বিধাতা ফাঁকে আশীৰ্ব্বাদ করেন। তিনি দেহযাত্রার সীমা অতিক্ৰম ক’রে শত শত শতাব্দীর আয়ু লাভ করে থাকেন। সেই বর লাভ করেছেন ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন। উপনিষদ বলেন যা এতদ্বিদূরমিতাস্তে ভবস্তি। যাঁরা তাকে জানেন তারা মৃত্যুর অতীত হন, সেই অমৃত তার