পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ SS করেছেন। এ যখন বুঝলাম সে বিরোধ আমার ঘুচে গেল, আমি তাই আজ তাতে ভক্তি নিবেদন করতে এসেছি। ‘ধর্মতত্ত্ব' পত্রিকা ` ' '& ७७ 2[९×६ ゞ○ゞq * • রাজনারায়ণ বসু রাজনারায়ণবাবুর গ্রন্থ ও জীবনী পড়িয়া তাহার যে পরিচয় পাইয়াছি তাহার কথা আমি বলিব না। শিশুকালে আমার বয়স যখন ৮ বছর তখন হইতে আমি তীহাকে আমাদের বাড়িতে দেখিতাম। তখনই তাহার পক্ককেশ-গৌপদাড়ি। তবু তিনি যেন শিশুভাবে আমাদের সহিত মিশিতেন। তিনি যে অতি বড়ো লোক তখন আমরা তাহা বুঝিতাম না। এখনকার মতো তখন সংবাদপত্র, সভাসমিতি, সমালোচনা, প্রভৃতি ছিল না, সুতরাং মানুষ লোকচক্ষুর আড়ালে বাড়িতে পাইত। শকুনি যেমন শবদেহ লইয়া টানা-হেঁচড়া করে, এখন জীবিতদের লইয়া সংবাদপত্র সেইরূপ করে। রাজনারায়ণবাবুর আমলে ‘সোমপ্রকাশ’ প্রভৃতি কাগজ ছিল বটে, তবে ওইসকল কাগজ সংযত ছিল। অন্তত এখন যেমন কাগজে সত্যমিথ্যায় জোড়াতাড়া দিয়া এক-একটা লোকের সম্বন্ধে লেখা হয় তখন তেমন হইত না। তখন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকিবার সুযোগ ছিল। এইরূপভাবে রাজনারায়ণবাবু মহৎ হইয়াছিলেন বলিয়া লোকের মধ্যে তিনি তেমন প্ৰসিদ্ধিলাভ করেন নাই। এমন-কি অমন মহৎ ব্যক্তির নামও হয়তো এইকালে অনেকে জানেন না ! রাজনারায়ণবাবু দিবারাত্র কার্য করিতেন। ভাঙাগড়ার এক বিশেষ যুগে তিনি জন্মলাভ করিয়াছিলেন। সকল-প্রকার দেশের কার্যের সহিত র্তাহার যোগ ছিল। আমার পূর্বে যাহারা বলিয়াছেন তীহাদের মুখে আপনারা শুনিয়াছেন যে, স্বদেশী মেলা, এবং নানাপ্রকার সভার সহিত র্তাহার যোগ ছিল; কিন্তু তবু তঁহার মুখে কোনাে চাঞ্চল্য ছিল না। জাপান-যাত্রার সময়ে দেখিয়াছি, অতি ভীষণ ঝটিকার মধ্যে জাপানি জাহাজের কর্ণধার আমার সহিত তখনকার বায়ুর গতির বেগ ইত্যাদি সম্বন্ধে আলোচনা করিতেছিলেন। এত বড়ো প্রবল ঝড় সাধারণত হয় না। ওই ঝড় সম্বন্ধে তঁহার মনে কোনো চিন্তা ছিল না। তাহা নহে; কিন্তু সকল কর্যের ব্যবস্থা, এমন-কি জাহাজ জলমগ্ন হইলে যাত্রীরা যাহা পরিয়া জলে ঝাপ দিবে, তাহার আয়োজন হইয়াছিল; তবু তিনি আমার সহিত গল্প করিতেছিলেন। রাজনারায়ণবাবু তখনকার সেই প্রবল ভাঙাগড়ার যুগে সকল কার্যের মধ্যে থাকিয়াও আমার মতো বালকের সহিত মেলামেলা কর্তব্য মনে করিতেন। শিশুদের প্রতি র্তাহার শ্রদ্ধা ছিল। ইহা যে তিনি কেবল কর্তব্য বুদ্ধিতে করিতেন তাঁহা নহে, ওই কর্তব্য,বুদ্ধির পশ্চাতে র্তাহার একটা পরিপূর্ণ জীবন রহিয়াছে। কর্তব্য বুদ্ধি অনেক সময়ে সংকীর্ণভাবে কার্য করিয়া থাকে। রাজনারায়ণবাবুর কর্তব্যবৃদ্ধি তেমন সংকীর্ণ নহে। তিনি আমার পিতার সকল কার্যের সঙ্গী ছিলেন; আমার অগ্রজ দ্বিজেন্দ্রনাথ আমার অপেক্ষা বয়সে অনেক বড়ো, তিনি তাহার সুহৃদ ছিলেন; আবার আমার মতো শিশুরও তিনি বয়স্য ছিলেন। সকলের সহিত মিশিবার জন্য উপর হইতে যে বারিবর্ষণ হয় উহাই পৃথিবীর সজীবতা রক্ষা করে তাঁহা নহে, পৃথিবীর ভিতরেও নিত্যপ্রবাহিত রসের ধারা আছে। কর্তব্যের চাপে নহে, আনন্দেই সংসারের সৃষ্টি হইতেছে। উপনিষদে আছে আনন্দাদ্ধোব খন্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে, অর্থাৎ আনন্দ হইতে জগৎ