পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ88 রবীন্দ্র-রচনাবলী মহাত্মা গান্ধী মানবজাতির ইতিহাসে এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা করিয়াছেন। তঁহার অদম্য মনঃশক্তি বলে তিনি এক তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতিকে নিজ অদৃষ্ট নিয়ন্ত্রণ জন্য প্রখর কর্ম-প্রচেষ্টার মুখে প্রধাবিত করিয়াছেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন দেশবাসীকে জাগাইয়া তুলিয়া নূতন কর্মেদ্যমে তিনিই তাহাদিগকে সঞ্জীবিত করিয়া তুলিয়াছেন ও দেশবাসিগণের সমক্ষে ভবিষ্যৎ ভারতের এক অত্যুজ্জ্বল চিত্ৰ তুলিয়া ধরিয়াছেন। মহান কর্মপ্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জনের জন্য মহাত্মাকে দীর্ঘজীবন দান করিবার জন্য ভগবৎ সমীপে প্রার্থনা জ্ঞাপন করা প্রত্যেকেরই এক পবিত্র কর্তব্যবিশেষ। আনন্দবাজার পত্রিকা &१ अनि ९७8 V বর্তমান বৎসরে মহাত্মাজীর জন্মদিবসে সমগ্র দেশের সহিত আমি আমার আস্তরিক শুভেচ্ছা! তঁহাকে জ্ঞাপন করিতেছি। সেইসঙ্গে এ বৎসর তীহার আদর্শে ও অনুপ্রেরণায় পল্লীশিল্পের পুনরুজীবনের জন্য যে বিরাট প্রচেষ্টার উদবােধন করা হইয়াছে, তাহাও আমি স্মরণ করিব। কারণ, ভারতের জাতীয়তার পুনর্গঠনে ইহার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি। আনন্দবাজার পত্রিকা ৫৷ আশ্বিন ১৩৪২ q আজিকার প্রধান সমস্যা হইল। এই যে, জাতীয় ঐক্যের আবহাওয়া সৃষ্টি হইলেও আমরা এখনাে এক হইতে পারি নাই। সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা এবং সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় সংহতির মূলে কুঠারাঘাত করিতেছে; গান্ধীজীর রাজনীতির মূল লক্ষ্য হইল ঐক্য স্থাপন, সেই ঐক্য শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের অস্ত্রস্বরূপ নয়- উহা দুর্বার নৈতিক শক্তিও বটে। তিনিই সর্বপ্রথম রাজনীতিকে ধর্মের অঙ্গীভূত করিয়াছেন। তিনি পাশ্চাত্য রাজনৈতিক আন্দোলনসমূহের গোড়ার খবর রাখেন; কাজেই তিনি বুঝিতে পারিয়াছেন, একমাত্র সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া মহত্তর কিছুর অভাব্যবশত পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্তঃস্থল গলদে পরিপূর্ণ। পাশ্চাত্য রাজনীতির পাঠশালায় শিক্ষাপ্রাপ্ত এমন অনেক রাজনৈতিক নেতা আজও আমাদের মধ্যে আছেন। ইহাদের নিকট সাফল্যের স্থান সত্যেরও উর্ধের্ব তীহাদের যে তথাকথিত যোগ্যতা আছে তাহা আমরা স্বীকার করিতে পারি, কিন্তু আমরা তঁহাদিগকে ভক্তি করিতে পারি না। আত্মসর্বস্ব পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদের নিষ্ঠুরতা প্ৰলয়ংকর বিপদের দিকে চলিয়াছে। পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদের বিষময় ফল দিনের পর দিন প্রকট হইয়া উঠিতেছে। পন্থা নির্বাচনের পূর্বে আমাদের তাহা ভাবিয়া দেখা উচিত। খৃস্টধর্ম শিক্ষা দেয়, সত্যই পরমেশ্বর। কিন্তু বর্তমান যুগের খৃস্টানেরা তৎপরিবর্তে পাশবিক শক্তির গীেরব ঘোষণা করে। আধুনিক যুগের একমাত্র খাটি খৃস্টান কাউন্ট টলস্টয় গান্ধীজীকে দেখাইয়াছেন, রাজনীতির ক্ষেত্রেও নৈতিক শক্তি কিরূপ কার্যকর। স্বদেশগ্ৰীতির বুলি বর্তমান যুগের অভিশাপ সত্য ও অহিংসা দ্বারা মহাত্মা গান্ধী আমাদিগকে ওই বিপদ হইতে