পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ S8 ভাবেই তুমি এসেছিলে— আমার পরম আত্মীয়রূপে। সেদিন আমি কামনা করেছিলাম আজ যেপ্রতি তোমার ও তোমার দেশের কাছ থেকে আমি পেলাম যেন ভবিষ্যতে তোমাকে আমাদের মাঝে পেয়ে সেইভাবে আত্মীয়রূপে একদিন অভ্যর্থনা করে নিতে পারি। আজ তুমি এখানে আমাদের কাছে এসেছি। আশ্রমের সকলের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি আজ আমি তোমাকে জ্ঞাপন করছি। এ আমার আশ্রম; এখানে আমি শুধু কবি নাই, এখানে আমি বস্তুকে সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছি। তোমাদের দেশে আমাকে যে রূপে দেখেছিলে সে রূপ শুধু আমার কবিরূপ। সেটা আমার জীবনের একটি বড়ো প্রকাশ হলেও সেটা আংশিক। এখানে তুমি আমাকে পূর্ণতররূপে আমার নিজের সত্য আবেষ্টনের মধ্যে দেখবে। এখানে দেখবে কবি কীরূপে তার স্বপ্নকে বস্তুরূপে প্রত্যক্ষ করবার সাধনা করছে। এই আশ্রমে আমরা সমগ্ৰ বিশ্বকে নিমন্ত্রণ করেছি; সমস্ত বিশ্ব এখানে আমাদের অতিথি; তুমি আমাদের আশ্রমের এই সখের বাণী বহন করে তোমাদের দেশে নিয়ে যাবে এই আমার কামনা। প্রবাসী পৌষ ১৩৩৫ • মদনমোহন মালব্য ভারতবর্ষ যে দেবতাকে বলেছেন, এষ দেবো বিশ্বকর্ম মহাত্মা, সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ সেই সৰ্ব্বজনের হৃদয়বাসী পরম দেবতার উপাসনায় তুমি আজ পৌরোহিত্য পদ গ্রহণ করেছি, তুমি ব্রাহ্মণ, সর্ববর্ণকে সম্মানিত করবার উদার অধিকার তোমার, সেই অধিকারকে তুমি অশঙ্কচিত্ত অধ্যবসায়ে স্বীকার করেছ, ভারতে ব্রাহ্মণকে ধন্য করেছ, ব্রাহ্মণকে সত্য করেছ, তোমাকে অভিবাদন করি। আমাদের ধর্মশাস্ত্ৰে আছে সুখং হবমতঃ শেতে মুখঞ্চ প্রতিবুধ্যতে সুখং চরতি লোকে, স্মিন্নবমস্ত বিনশ্যতি।” ভারতে আমরা দীর্ঘকাল মানুষকে অপমানিত করেছি। তাকে হীন করে রেখেছি, সেই পাপে আমরা বিনাশের পথে চলেছিলুম, সেই পাপ মোচন করে বিনাশের থেকে দেশকে রক্ষা করবার চেষ্টায় তুমি প্রবৃত্ত, তোমাকে আমি অভিবাদন করি। সংসারে পণ্ডিত্য দুর্লভ নয় যে পাণ্ডিত্য আক্ষরিক। তুমি ভারতের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাকে আত্মায় গ্রহণ করেছ, সেই বিদ্যার প্রভাবে দেশকে মোহমুক্ত করবার জন্য তোমার উদ্যম, সেই বিদ্যাকে দেশে একদা শিক্ষার ক্ষেত্ৰ তুমি প্রসারিত করেছ, আজ তুমি ভারতে স্বরাষ্ট্রের পথকে প্রশস্ত করবার জন্য তোমার অসম্মান শক্তিকে নিযুক্ত করেছ। রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা তোমার চেষ্টার সমর্থন না করাতেও পারে, কিন্তু যে সাধনা মহতী ব্যর্থ হলেও তা দেশের লোকের পক্ষে চিরসম্পদ, সেই সম্পদ থেকে কোনাে প্রতিকূলতা দেশকে বঞ্চিত করতে পারবে না। তোমাকে আমি অভিবাদন করি। সমস্ত ভারতবর্ষের নামে এখানে আমরা তপস্যাক্ষেত্র রচনা করেছি। দেশের চিত্তকে স্বকৃত ও পরকৃত সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত করব, এই আমাদের সংকল্প। আমাদের স্বল্প শক্তিতে এই সংকল্প সমস্ত বিরুদ্ধতা অতিক্রম করে সম্পূর্ণ সিদ্ধিলাভ করবে কি না জানি না। কিন্তু দুঃসাধ্যতার ভয়ে চেষ্টামাত্র না করলে যে আত্মলাঘব ঘটত, তার থেকে উদ্ধার পাবার জন্য দীর্ঘকাল সকল প্রকার আঘাত-ব্যাঘাত, বিদ্রুপ ও বিমুখতার সঙ্গে সংগ্রাম করে এসেছি। হে কৃতী