পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

δ ( 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ধর্মানুরাগীরূপ চােরাবালির উপর দাঁড়াইয়া আমরা জাতীয় বিচ্ছিন্নতার দিকে অগ্রসর হইতেছি। আমার হিন্দু স্বদেশবাসীদের নিকট আমার দৃঢ় বিশ্বাসপূর্ণ বক্তব্য এই যে, “তোমাদের সমাজ অর্থহীন আচার ও অনুষ্ঠানের ভরে কাতর; তোমরা যদি কুসংস্কার ত্যাগ করিয়া নূতন যুগের আহ্বানে সাড়া না দাও, তাহা হইলে তোমাদের ধ্বংস হইবে।” আমার মুসলমান স্বদেশবাসী যাহারা যে-কোনোরূপ সমালোচনায় ক্রুদ্ধ হয়— আমি কেবল তুরস্ক ও পারস্যের দৃষ্টাস্তের প্রতি তাহাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারি। SS C3 St আনন্দবাজার পত্রিকা ७ ॐ2श:० ९७80 জগদীশচন্দ্র বসু স্যার জগদীশের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য যখন আমার হয় তখন তিনি যুবক এবং আমিও ছিলাম। তাহার প্রায় সমবয়সী। সে সময় জড়াজগতের সহিত প্ৰাণীজগতের গভীর আত্মীয়তার কল্পনায় তিনি আচ্ছন্ন মূক প্রকৃতির গোপন ভাষা জানিবার জন্য তীহার আশ্চর্য আবিষ্কার-প্রতিভার নিয়োজনে ব্যাপৃত। বাহিরের পরস্পর বিরোধিতার অন্তরালে যে জগতের অর্থ লুকানো, তাহার রহস্য ধরা পড়িতেছে তাহার নিপুণ জিজ্ঞাসার সাড়ায়। তাহার নিরস্তর বিস্ময়ের দৈনন্দিন আনন্দের অংশভাগী হওয়ার বিরল সৌভাগ্য আমার হইয়াছিল। আদিম যুগে সমস্ত বস্তুর শৈশব সারল্যে একটা সাধারণ যোগসূত্র ধরা পড়িত; আমার বিশ্বাস, কবির মন সেই আদিম কালের উত্তরাধিকারী। সমস্ত সৃষ্টির উপর নিজের সত্তা বিস্তুত রহিয়াছে, এই অনুভূতির আনন্দ আস্বাদন করেন মায়ার এই পূজারীরা; তাই আপাতদৃষ্টিতে যাহা প্রাণহীন তাহার মধ্যে প্ৰাণীয় সমধর্ম তাহারা খোঁজেন। মনের এই ভঙ্গি সব ক্ষেত্রেই কোনো নির্দিষ্ট বিশ্বাসেরসর্বজীবত্ববাদই হােক বা সৰ্বেশ্বরবাদই হােক— উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। এ ভঙ্গি নিছক মন ভুলানো হইতে পারে, যেমন দেখি শিশুর খেলায়; নৈসৰ্গিক জগতের সমস্ত ক্রিয়ায় প্রাণশক্তি আরোপের যে ঝোক আমাদের অবচেতন মনের আছে সেই বোক হইতেই শিশুর খেলার সৃষ্টি। শৈশব হইতেই আমি উপনিষদের পরিচয় লাভ করি; আদিম অপরোক্ষানুভূতিতে উপনিষদ ঘোষণা কুর এই পৃথিবীতে যাহা কিছু কিমান সমস্তই প্রাণশক্তিতে স্পদমান, যে প্রাণ অনন্তে একীভূত। এ কারণেই আমি উদ্‌গ্ৰীব উৎসাহে আশা করিতে থাকি, পৃথিবীতে প্ৰাণের সীমাহীন বিস্তুতির কল্পনা এইবার বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে মঞ্জুর হইবে। নিভৃত সাধনপথে আচার্যের পদাঙ্ক অনুসরণের সুযোগ আমি পাই, আমি ছিলাম পল্লবগ্রহী, তবু প্ৰত্যহিক বিষয়ের সমারোহে আমার ভাগ ছিল তাহার দুৰ্গম যাত্রার এই প্রারম্ভিকালে যখন বাধা ছিল প্রচুর ও দুর্লঙ্ঘ্য এবং গুণগ্ৰাহীতার উপর ছিল ঈর্ষার পাষাণভার, তখন র্তাহার পক্ষে সুহৃদ সঙ্গ ও সহানুভূতির কিছু মূল্য ছিল— আসুক না সে সঙ্গ ও সহানুভূতি এমন একজনের নিকট হইতে, যে র্তাহার সহিত মানসিক যোগাযোগ রক্ষার পূর্ণ যােগ্যতার অধিকারী। তবু আমার সগর্ব দাবি এই যে, সেই স্বল্প স্বীকৃতি ও । জনসাধারণের দুর্বল সমর্থনের কালে আমি তীহাকে তঁহার কোনো কোনো আণ্ড প্রয়োজনে ও গ মাঝে মাঝে হতাশার মুহূর্তে সাহায্য করিয়াছি। আমার সেই দূরাপসৃত স্মৃতির পটভূমিতে তাহার বিপুল ভবিষ্যৎ সাফল্যের স্বল্পতম আলোক- | রেখা দেখিতে পাই না। দেশবাসীকে বিজ্ঞানের কল্যাণস্পর্শে সঞ্জীবিত করিবার জন্য সমৃদ্ধ এই | বিজ্ঞান মন্দির নির্মাণের পক্ষে আবশ্যক প্রভূত সম্পদের সহিত বৈজ্ঞানিক খ্যাতিকে যুক্ত ।