পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

δα. Ο রবীন্দ্র-রচনাবলী অখিলের প্রবেশ অখিল। জ্যাঠামশায়, একটা পরামর্শ দাও। বিপ্রদাস। কেন অখিল, কী হয়েছে? অখিল। সঙ্গে এক পাল সাহেব— দালাল হবে, কিংবা মদের দোকানের বিলিতি শুড়ি— কাল পীরপুরের চরের থেকে কিছু না হবে তো দুশো। কাদাখোঁচা মেরে নিয়ে উপস্থিত। আজ চলেছে চন্দনীন্দহের বিলে। শীতের সময় সেখানে হাঁসের মরসুম— রাষ্ণুসে ওজনের জীবহত্যে হবে- অহিরাবণ, মহীরাবণ, হিড়িম্বা, ঘটােৎকচ, ইস্তিক কুম্ভকর্ণের পর্যন্ত পিণ্ডি দেবার উপযুক্ত, প্রেতলোকে দশমুণ্ড রাবণের চোয়াল ধরে যাবার মতো। বিপ্রদাস নীরব অখিল। তোমারই হুকুমে ওই বিলে কেউ শিকার করতে পারে না। সেবার তো জেলার ম্যাজিষ্ট্রেটকে পর্যন্ত ঠেকিয়েছিলে। তখন আমরা ভয় করেছিলুম তোমাকেই পাছে সে রাজহাঁস বলে ভুল করে। লোকটা ছিল ভদ্র, মেনে গেল নিযেধ। কিন্তু এরা কেউ গোমুগদ্বিজ কাউকে মানবার মতো মানুষ নয়। তবু যদি বলো একবার নাহয় বিপ্রদাস। না, না, কিছু বোলো না। কুমুদিনী। কাকাবাবু, বারণ করে পাঠাও। দেওয়ানজি। কী বারণ করব? কুমুদিনী। পাখি মারতে। বিপ্রদাস। ওরা ভুল বুঝবে, কুমু, সইবে না। কুমুদিনী। তা বুকুক ভুল। মান অপমান শুধু ওদের একলার নয়। বিপ্রদাস। রাগ করিস নে কুমু। আমিও একদিন পাখি মেরেছি, তখন অন্যায় বলে বুঝতেই পারি নি। এদেরও সেই দশা | কুমুদিনী। জীবহত্যা করে এরা যদি আমোদ পায় করুক আমোদ। কিন্তু এদের কি ভদ্রতাও নেই? তোমার অনুমতিও নিল না! এত অবজ্ঞা তোমাদের পরে! বিপ্রদাস। এ ভদ্রতার কথা নয়, কুমু, হয়তো আত্মীয়তার দাবি। কুমুদিনী। আত্মীয়তা! আমাকে ছেলেমানুষের মতো ভোলােচ্ছ কেন? আমার ঘর থেকে কোনোদিন একখানা বই তুমি সরাও না। আমাকে না জিজ্ঞাসা করে। আত্মীয়ের কাছে ভদ্র হবার দরকার নেই। এ তো কোনােদিন তুমি আমাকে বল নি! কাকাবাবু! দেওয়ানজি। কী মা! কুমুদিনী। আমি শুনতে, পেলুম, দাদা ওঁদের আনবার জন্যে স্টেশনে গিয়েছিলেন। কেন তোমরা যেতে দিলে ? দেওয়ানজি। আমরা তো জানতৃমই না। কুমুদিনী। দাদা গিয়েছিলেন অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে আমারই জন্যে। তার পরে এরা কি একবার দেখতে এসেছিলেন কাকাবাবু? দেওয়ানজি। না। কুমুদিনী। কেবলমাত্র টাকার জোরে এমন মানুষকে অবজ্ঞা করতে সাহস করলেন!! দাদা কেন নিজেকে খাটো করলেন আমার জন্যে! আমার মরণ হল না কেন ? বিপ্রদাস। কুমু, গোড়া থেকেই বুঝতে পেরেছি। আমরা জাতে আলাদা। এখনো যদি বলিস এ বিয়ে আমি ভেঙে দিতে পারি! দেওয়ানজি। চুপ করো বড়োবাবু, এ-সব কথা এখন নয়, সময় বয়ে গেছে। বিপ্রদাস। না দেওয়ানজি, না- সময় কাকে বলছি তুমি! এই পাঁজির লগ্ন! কুমুর সমস্ত