পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb.by রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মোতির মা। কী করবে বলে দিকি? বিপ্রদাসবাবুর উপর ওঁর রাগটা যেন ক্রমে ক্রমে (বড়েই উঠছে। নবীন। তুমি তো জািন না, এ সেই তিন পুরুষ আগেকার আক্ৰোশ, ঘোষালদের হেরো-যাওয়া লজ্জার প্রতিশোধ। ভাগ্যের দৌলতে দাদা আজ চাটুজেদের সবটাকেই দেনার জালে জড়িয়ে ধরেছেন, তাদের আর পালাবার পথ নেই। কিন্তু বউরানী এখনো রয়ে গেছেন তার আয়ত্তের বাইরে। দাদা কিছুতেই তাঁকে নিজের কবলে পাচ্ছেন না। বুঝে উঠতেই পাচ্ছেন না তো আয়ত্তে আনবেন কী! তাই বিপ্রদাসের উপরই ওঁর রাগ ফুলে ফুলে উঠছে। ভেবেছেন সেই যেন অন্তরায়, তাই তাকে একেবারে লোপ করে দিতে না পারলে বউরানীকে পাবেন না নিজের মুঠোর মধ্যে সর্বস্ব করে। মোতির মা। কিন্তু এই কি তার সহজ উপায়? এ তো জবরদস্তি! ও মেয়ে এ পথ মানবে কেন? আর ঐশ্বর্য পেতে বড়োঠাকুরের কতদিন সময় লাগল, মন পেতে দুদিন সবুর সইবে না? ধনলক্ষ্মীর দ্বারে হাঁটাহাঁটি করে মরতে হয়েছে, এ লক্ষ্মীর কাছে হাত পাততে হবে না? এ কি লুঠ করা সম্পত্তি যে গায়ের জোর দেখালেই কেড়ে নেওয়া যাবে? এখন তুমি যাও! নবীন। যাব কোথায়? মোতির মা। বড়ো ঠাকুরের ডেস্কো খোজ করতে যাও। কুমুদিনীর প্রত্যাবর্তন মোতির মা। দেখা পেলে দিদি ? কুমুদিনী। না, তাকে ওরা ফিরিয়ে দিয়েছেন! ঠাকুরপো, তোমায় একটি কাজ করতে হবে, বলো করবে ? নবীন। নিজের অনিষ্ট যদি হয় তো এখনি করব; কিন্তু তোমার অনিষ্ট হলে, কখনোই না। কুমুদিনী। আমার আর কত অনিষ্ট হবে? আমি ভয় করি না। আমার এই বালা বেচে দাদার জন্য স্বস্তোন করাতে হবে। ঠাকুরপো, দাদার জন্যে আর কিছুই তো করতে পারব না, কেবল যদি পারি দেবতার পায়ে তীর জন্যে পুজো পাঠিয়ে দেব। নবীন। দেবতাকে হাতে করে দিতে হয় না বউরানী, তিনি এমনি নেন। তুমি তীকে যে ভক্তি কর তারই পুণ্যে তোমার দাদার জন্যে দিনরাত্রি স্বাস্তোন হচ্ছে। তোমার আর কিছু করতে হবে না, কিছু দরকার নেই। কুমুদিনী। ঠাকুরপো, সংসারে তোমরা নিজের জোরে কত কাজ করতে পাের, আমাদের যে সে জোর খাটাবার জোর নেই! ভালোবাসি। অথচ নাগাল মেলে না, তাদের কাজ করব কী করে? দিন যে কাটে না, কোথাও যে রাস্তা খুঁজে পাই না! ঠাকুরপো, কাউকে জান' যিনি আমাকে গুরুর মতো উপদেশ দিতে পারবেন? নবীন। কী হবে বউরানী? কুমুদিনী। নিজের মন নিয়ে যে আর পেরে উঠছি নে! নবীন। সে তো তোমার মনের দোষ নয়! ভয় কোরো না, তোমার দাদাই তোমাকে উপদেশ ( | কুমুদিনী! সেদিন আমার আর আসবে না। মোতির মা। ও মা! বড়োঠাকুর আপিসে যাবেন না? [সকলের প্রস্থান মধুসূদনের প্রবেশ মধুসূদন। বড়োবউ।