পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>述の রবীন্দ্র-রচনাবলী যেন পথ ভুলে গেছি! আগে মনে করতুম ভ ই সহজ। সব স্ত্রী সব স্বামীকে আপনিই ভালোবাসে; আজ দেখছি ভালোবাসতে পারাটাই সব চেয়ে দুর্লভ, জন্মজন্মান্তরের সাধনায় ঘটে। আচ্ছ, সত্যি করে বলে তো ভাই, সব স্ত্রীই কি স্বামীকে ভালোবাসে? মোতির মা। ভালো না বাসলেও ভালো স্ত্রী হওয়া যায়। নইলে সংসার চলবে কী করে? কুমুদিনী। সেই আশ্বাস দাও আমাকে। আর কিছু না হই, ভালো স্ত্রী যেন হতে পারি। পূণ্য তাতেই বেশি। সেইটাই কঠিন সাধনা! স্বামীকে ভালোবাসি নে এ কথা বলা পাপ, ভাবা পাপ! মন তো আমার কিছুতেই এ কথা মেনে নিতে রাজি নয। কিন্তু কই, তবু তো বুকের মাঝে তীকে পাচ্ছি নে যেমন করে পেয়েছিলুম আমার ঠাকুরকে। আচ্ছা, দাদাকে টেলিগ্রাফ করতে বলেছিলুম, করেছ? মোতির মা ! হাঁ, তখনি করেছি। কুমুদিনী। উত্তর আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন? মোতির মা ! তোমার মনের উদবেগে দেরি বােধ হচ্ছে। কুমুদিনী। মন কেন এত ছটফট করছে, বলব ? মোতির মা। বলে। কুমুদিনী। ঠাকুরকে আর আমি বিশ্বাস করতে পারছি নে। কেবলই মনে হচ্ছে, দাদা ছাড়া ত্ৰিভুবনে আমার আর কেউ নেই। সেই আমার দাদার জন্যে দিনরাত্ৰি ভাবনা। যে দেবতা জীবনের সফলতা থেকে আমাকে বিনা দোষে নিঃশেষে বঞ্চিত করতে পারলেন, আমার এই দুঃখে তীর কি কোনাে দরদ আছে, দাদাকেই আমি এই প্রশ্ন করব। মোতির মা। তাই কোরো। কুমুদিনী। আমার টেলিগ্রামের জবাব এলে তখন যেন পাই বােন। মোতির মা। আমার চেষ্টার ত্রুটি হবে না। [নেপথ্যে গান] | আজি কোন ধন হতে বিশ্বে আমারে কোন জনে করে বঞ্চিত, তব চরণ-কমল-রতন-রেণুকা অস্তরে আছে সঞ্চিত৷ তবু প্ৰাণ মন পীযুষ-পরশে পলে পলে পুলকাঞ্চিত৷ আজ কিসের পিপাসা মিটিল না ওগো পরম পরানীবল্লভ ! চিতে চিরসুধা করে সঞ্চার তব সকরুণ করপল্লব। নাথ, যার যাহা আছে তার তা থাক, আমি থাকি চিরলাঞ্ছিতশুধু তুমি এ জীবনে নয়নে নয়নে থাকো থাকো চিরবাঞ্ছিত ৷ ]