পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন S মধুসূদন। ভয়টা কিসের শুনি। নবীন মাথা চুলকোঁতে লাগল মধুসূদন। ভয়টা কাকে বলোই-না। নবীন। এ সংসারে তোমাকে ছাড়া ভয় কাউকেই করি নে। দেখছি তোমার ভাবগতিক ভালো নয়, তাই স্পষ্ট করে জানতে চাই গ্ৰহ কী করতে চান আমাকে নিয়ে, আর তিনি ছুটিই বা দেবেন। কোন নাগাত। মধুসূদন। তোমার মতো নাস্তিক, কিছু বিশ্বাস কর না, শেষকালে— নবীন। দেবতার 'পরে বিশ্বাস থাকলে গ্রহকে বিশ্বাস করতুম না, দাদা। ডাক্তারকে যে মানে না, হাতুড়েকে মানতে তার বাধে না। মধুসূদন। লেখাপড়া শিখে, বাঁদর, তোমার এই বিদ্যে! নবীন। লোকটার কাছে যে ভৃগুসংহিতা রয়েছে। যেখানে যে-কেউ যে-কোনােখানেই জন্মাবে সকলেরই কুষ্টি একেবারে তৈরি-— খাস সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এর উপরে তো আর কথা চলে না। হাতে হাতে পরীক্ষা করে নাও। মধুসূদন। বোকা ভুলিয়ে যারা খায় ভগবান তাদের পেট ভরাবার জন্যে তোমাদের মতো বােকা জুগিয়ে থাকেন। নবীন। আবার সেই বোকাদের বাঁচাবার জন্যে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মতো বুদ্ধিমান। ভৃগুসংহিতার উপরে তোমার বুদ্ধি খাটিয়ে দেখোই-না। তোমার কাছে বড়ো বড়ো ঋষিমুনিদের ফাঁকিও ধরা পড়বে। মধুসূদন। আচ্ছা, দেখব তোমার কুম্ভকোনামের চালাকি। নবীন। তোমার যে-রকম জোর অবিশ্বাস দাদা, ওতে গণনায় ভুল হয়ে যায়। মানুষকে বিশ্বাস করলে মানুষ বিশ্বাসী হয়ে ওঠে, গ্রহদেরও সেই দশা। এই দেখে-না, সাহেবগুলো গ্ৰহ মানে না, তাই তারা তোরস্পর্শে যাত্রা করলেও লড়াই জেতে। সেদিন ছিল দিকশূল, আরো কত কী, বেরিয়ে পড়ল। তোমাদের ছোটোসাহেব, ঘোড়দৌড়ে জিতে এল বাজি- আমি হলে বাজি জেতা দূরস্তাং, ঘোড়াটা ছুটে এসে লাথি বসিয়ে দিত। আমার পেটে। দাদা, এই সব পাজি গ্রহনক্ষত্রের উপর তোমার বুদ্ধি খাটিয়ে না-- একটু বিশ্বাস মনে রেখো। মধুসূদন। আচ্ছা, কালকে তাকে দেখা যাবে। নবীন। আমি তাকে আনিয়েছি। তোমাকে নির্জনে পাব বলে এই দশটা রাত্রেই তাকে নিয়ে এলুম। মধুসূদন। কোথায় সে? নবীন। চলো-না সেখানে গিয়ে একবার মধুসূদন। না না, বাইরে নয়, লোকজন এসে পড়বে। नदीम। उा शल केि মধুসূদন। হাঁ, তাকে এইখানেই ডেকে আনাে, শোবার ঘরেই। [ নবীনের প্রস্থান চঞ্চলভাবে মধুসূদন পায়চারি করে বেড়াতে লাগল কেদার ! কেদারের প্রবেশ কেদার। মহারাজ! মধুসূদন। এই কার্পেটন্ট সরিয়ে নিয়ে যা। বেটা কোন বড়োবাজারের ধুলো পায়ে করে আনবে! -