পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন SO(፩ কুমুদিনী। কিসের জন্যে ? মধুসূদন। তুমি যে আমার এই বিছানায়৷] শুতে পেরেছ সেই অযোগ্যতার জন্যে? রোসো, একটু দাঁড়াও। আমি বলে দিচ্ছি, কালই তোমাকে যেতেই হবে তোমার দাদার ওখানে, কিংবা যেখানে খুশি। ভেবে রেখেছ তোমাকে নইলে আমার চলবে না। এতদিন চলেছিল, আজও চলবে, ভালেই চলবে। যাও তবে, তোমার ওই ফরাসখানার ঘর পড়ে আছে, যাও ওখানে শুতে। [কুমুদিনীর প্রস্থান যাক গে। কে, শ্যামা? কী করছ শ্যাম ? কী চাই তোমার? আমায় কিছু বলবে? চলো, যাচ্ছি। শ্যামাসুন্দরী। ঠাকুরপো, আমায় মেরে ফেলো তুমি। আর সইছে নামধুসূদন। ঈস! তোমার গা যে একেবারে ঠাণ্ডা হিম। চলো, চলো, হিমে নয়। চলে আমার ঘরে । নিজের শালের এক অংশে শ্যামাকে আবৃত করে চলে গেল। সেই মুহূর্তে মোতির মা এবং নবীনের প্রবেশ মোতির মা। না, এ আমি কিছুতেই সইব না। আমি বাধা দেব। নবীন। তাতে আরো অনর্থ বাড়বে মেজেবিউ বাধা দিতে পারবে না। মোতির মা। ভগবান কি তবে এও চোখ মেলে দেখবেন? এমন নীচের হাতে অপমান দিদির कोल छिल? নবীন। আশ্চর্য হবার তো কিছু নেই। যে ঘুমন্ত ক্ষুধাকে বউরানী জাগিয়েছেন তার অন্ন জোগাতে পারেন নি। তাই সে অনৰ্থপাত করতে বসেছে। মোতির মা। তবে কি এটা এমনি ভাবেই চলবে? নবীন। যে আগুন নেভাবার কোনো উপায় নেই সেটাকে আপনি জুলে ছাই হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে দেখতে হবে। কুমুদিনীর প্রবেশ কুমুদিনী। আজ তোমার ঘরে আমাকে জায়গা দিতে হবে বোন। মোতির মা। সে কী কথা! কুমুদিনী। আজ রাত্তির থেকেই আমার শুভ নির্বােসন মঞ্জুর হয়েছে। কাল যাব দাদার ওখানে। ঠাকুরপো, রাগ কোরো না। নবীন। বউরানী, ফিরে আসতে দেরি কোরো না। এই কথাটা সব মন দিয়ে বলতে পারলে বেঁচে যৌতুম— কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল না। যাদের কাছে তোমার যথার্থ সম্মান সেইখানেই থাকে গিয়ে। অভাগা নবীনকে যদি কোনো কারণে কোনো কালে দরকার হয় স্মরণ কোরো। কুমুদিনী। আপাতত দরকার তোমার ঘরে আশ্রয় নেওয়া। রাগ করবে না তো? নবীন। রাগ করব আমি! দ্বারের বাইরে দরোয়ানি করবার এমন সুযোগ আর আমি পাব না। কুমুদিনী। আনন্দে ঘুম তো হবে না। সারা রাত— তোমাকেও যদি জাগিয়ে রাখি ঠাকুরপো! নবীন। তা হলে তো আমার ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমা হবে। কুমুদিনী। তোমাদের ভাগ্নী ওই ফুটুকিকে ডেকে আনাে তো ভাই। নবীন। কেন, তাকে কিসের দরকার? কুমুদিনী। সীতার অগ্নিপ্রবেশে সেই তো সীতা সেজেছিল। আবার শুনব তার মুখে তার পালার শেষ কথা ক’টি। [নবীনের প্রস্থান