পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 2ܔ শ্ৰীমান আগুনের আবির্ভাব হিসেব করতে শক্ত ঠেকে নি। মোতির মা। বউরানী, তুমিই ওকে নাই দিয়ে বাড়িয়ে তুলেছি। ও বুঝে নিয়েছে ওকে দেখলে তুমি খুশি হও, সেই দেমাকে— নবীন। আমাকে দেখলেও খুশি হতে পারেন যিনি, তার কি কম ক্ষমতা ? যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনিও নিজের হাতের কাজ দেখে অনুতাপ করেন, আর যিনি আমার পাণিগ্রহণ করেছেন তীর মনের ভাব দেবা ন জানাস্তি কুতো মনুষ্যাঃ।। ১ কুমুদিনী। ঠাকুরপো, তোমরা দুজনে মিলে কথা-কাটাকাটি করো, তৃতীয় ব্যক্তি ছন্দােভঙ্গ করতে চায় না, আমি এখন চললুম। মােতির মা। সে কী কথা ভাই! এখানে তৃতীয় ব্যক্তিটা কে? তুমি না। আমি ? গাড়ি ভাড়া করে ও কি আমাকে দেখতে এসেছে ভেবেছ? কুমুদিনী। না, ওঁর জন্যে খাবার বলে দিই গে। [কুমুদিনীর প্রস্থান মোতির মা। কিছু খবর আছে বুঝি? i নবীন। আছে। দেরি করতে পারলুম না, তোমার সঙ্গে পরামর্শ করতে এলুম। তুমি তো চলে এলে, তার পরে দাদা হঠাৎ আমার ঘরে এসে উপস্থিত। মেজাজটা খুবই খারাপ। সামান্য দামের একটা গিল্টি-করা চুরোটের ছাইদান টেবিল থেকে অদৃশ্য হয়েছে। সম্প্রতি যাঁর অধিকারে সেটা এসেছে তিনি নিশ্চয়ই সেটাকে. শোনা বলেই ঠাউরেছেন, নইলে পরকাল খোওয়াতে যাবেন কোন সাধে? জান তো, তুচ্ছ একটা জিনিস নড়ে গেলে দাদার বিপুল সম্পত্তির ভিতটাতে যেন নাড়া লাগে, সে তিনি সইতে পারেন না। আজ সকালে আপিসে যাবার সময় আমাকে বলে গেলেন শ্যামাকে দেশে পাঠাতে। আমি খুব উৎসাহের সঙ্গেই সেই পবিত্র কাজে লেগেছিলুম। ঠিক করেছিলুম তিনি আপিস থেকে ফেরবার আগেই কাজ সেরে রাখব। এমন সময়ে বেলা দেড়টার সময় হঠাৎ দাদা এক দমে আমার ঘরে এসে ঢুকে পড়লেন। বললেন, এখনকার মতো থাক। যেই ঘর থেকে বেরোতে যাচ্ছেন, আমার ডেস্কের উপর বউরানীর সেই ছবিটি চােখে পড়ল। থমকে গেলেন। বুঝলুম আড় চাহনিটাকে সিধে করে নিয়ে ছবিটিকে দেখতে দাদার লজা বােধ হচ্ছে। বললুম, দাদা, একটু বোসো, একটা ঢাকাই কাপড় তোমাকে দেখাতে চাই। মেতির মার ছোটাে ভাজের সাধ, তাই তাকে দিতে হবে। কিন্তু গণেশরাম দামে আমাকে ঠকাচ্ছে বলে বোধ হচ্ছে। তোমাকে দিয়ে সেটা একবার দেখিয়ে নিতে চাই। আমার যতটা আন্দাজ তাতে মনে হয় না তো তেরো টাকা তার দাম হতে পারে। মোতির মা ও আবার তোমার মাথায় কোথা থেকে এল? আমার ছোটো ভাজের সাধ হবার কোনো উপায়ই নেই। তার কোলের ছেলেটির বয়স তো সবে দেড় মাস। বানিয়ে বলতে তোমার আজকাল দেখছি কিছুই বাধে না। এই তোমার নতুন বিদ্যে পেলে কোথায়? নবীন। যেখান থেকে কালিদাস। তঁর কবিত্ব পেয়েছেন, বাণী বীণাপাণির কাছ থেকে। মোতির মা। বীণাপাণি তোমাকে যতক্ষণ না ছাড়েন ততক্ষণ তোমাকে নিয়ে ঘর করা যে দায় হবে। নবীন। পণ করেছি। স্বৰ্গারোহণকালে নরকদর্শন করে যাব, বউরানীর চরণে এই আমার দান। মোতির মা। ঢাকাই কাপড় তখনি তখনি তোমার জুটল কোথায়? নবীন। কোথাও না। কুরি মিনিট পরে ফিরে এসে বললুম, গণেশরাম সে কাপড় আমাকে না বলেই ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। দাদার মুখ দেখে বুঝলুম, ইতিমধ্যে ছবিটা র্তার মগজের মধ্যে, ঢুকে স্বপ্নের রূপ ধরেছে। কী জানি কেন, পৃথিবীতে আমারই কাছে দাদার একটু আছে চক্ষুলজ্জা, আর কারো হলে ছবিটা ধী করে তুলে নিতে র্তার বাধত না। ’ মোতির মা। তুমিও তো লোভী কম নও। দাদাকে নাহয় সেটা দিতেই।