পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন S S (ሉ হয়ে ছিলুম, এমন সময় তুমি এলে আমাদের ঘরে। ঘরের আশ খুব করেই মিটেছিল, কিন্তু বিধাতার সাইল না। তুমি কি শ্বশুরবাড়ি একেবারেই যাবে না ঠিক করেছ? কুমুদিনী। না, যাব না। মোতির মা। তা হলে তোমার গতি কোথায় ? কুমুদিনী। মস্ত এই পৃথিবী, এর মধ্যে কোনাে এক জায়গায় আমারও একটুখানি ঠাই হতে পারবে। জীবনে অনেক যায় খসে, তবুও কিছু বাকি থাকে। ঠাকুরপো, তা হলে কী করবে এখন? নবীন। নদীর ধারে কিছু জমি আছে, তার থেকে মোটা ভাত জুটবে, হাওয়া খাওয়াও চলবে। উত্মার সঙ্গে মোতির মা। ওগো মশায়, না, সেজন্যে তোমাকে ভাবতে হবে না। ওই মির্জাপুরের অন্নজলে দাবি রাখি, সে কেউ কাড়তে পারবে না। আমরা তো এত বেশি সম্মানী লোক নই, বড়ো ঠাকুর তাড়া দিলেই আমনি বিবাগী হয়ে চলে যাব! তিনিই আবার আজ বাদে কাল ফিরিয়ে ডাকবেন, তখন ফিরেও আসব, ইতিমধ্যে সবুর সইবে, এই বলে রাখলুম। নবীন। সে কথা জানি মেজেবিউ, কিন্তু তা নিয়ে বড়াই করি নে। পুনর্জন্ম যদি থাকে। তবে সম্মানী হয়েই যেন জন্মাই, তাতে অন্নজলের যদি টানাটানি ঘটে সেও স্বীকার। | মোতির মা ও নবীনের প্রস্থান ভৃত্য। ডাক্তারবাবু এসেছেন। কুমুদিনী। ডেকে দাও। [ভূত্যের প্রস্থান ডাক্তারের প্রবেশ ডাক্তার। নাড়ি আরো খারাপ, রাত্তিরে ঘুম কমেছে। বােধ হয় রোগী ঠিক বিশ্রাম পাচ্ছে না। সাবধানে রেখো। আমি চললুম। [প্ৰস্থান কালুর প্রবেশ কালু। একটা কথা না বলে থাকতে পারছি নে- জাল বড়ো জটিল হয়ে এসেছে, তুমি যদি এই সময়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে না যাও, বিপদ আরো ঘনিয়ে ধরবে। আমি তো কোনো উপায় ভেবে পাচ্ছি নে। তোমার স্বামীর ওখান থেকে তাগিদ এসেছে, সেটা অগ্রাহ্য করবার শক্তি কি আমাদের আছে? আমরা যে একেবারে তার মুঠোর মধ্যে। কুমুদিনী। আমি কিছুই বুঝতে পারছি নে, কালুদা। প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। মনে হয় মরণ ছাড়া কোনো রাস্তাই আমার খোলা নেই। কালু। না দিদি, শান্ত হও, কিছু ভেবাে না, একটা কিছু উপায় হবেই। চললুম। আমি। [প্ৰস্থান মোতির মার প্রবেশ মেতির মা। দিদি, একটা কথা তােমাকে বলে যাই। পেয়াতি হয়েছ সে খবর কি এখনাে তুমি নিজে জানতে পার নি? এই মাত্র তোমার পিসিমাকে বলে এসেছি জানাতে তোমার দাদাকে।