পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন S. Na. GS) ব্যঙ্গকৌতুক স্বৰ্গে চক্রটেবিল বৈঠক ব্ৰহ্মা। পুরন্দর, তোমাদের অত্যন্ত কৃশ দেখাচ্ছে, যেন অনাবৃষ্টিদিনের পাতা-ঝরা বনস্পতির মতো। স্বর্গে কি অমৃত-সঞ্চয়ে দৈন্য ঘটেছে? ইন্দ্ৰ। পিতামহ, অনাবৃষ্টিই তো বটে। স্বগীয় বনস্পতির শিকড় আছে মর্ত্যের মাটিতে— দিনে দিনে সেখানে শ্রদ্ধার রস শুকিয়ে এসেছে। নরলোকে কানাকানি চলছে যে, সৃষ্টিব্যাপারটা আকস্মিক মহামারীর মতো, বসন্তের গুটি যেন, আপনা হতেই আপনাকে হঠাৎ ফুটিয়ে তোলে; এটা দেবতার হাতের কারুকার্য নয়। অর্থাৎ এটা এমন একটা রোগ, যা চলছে মৃত্যুর অনিবাৰ্য পরিণামে। এমন-কি, ওখানকার পণ্ডিতরা চরম চিন্তানলের দিনক্ষণ পর্যন্ত অঙ্ক কষে স্থির করে দিয়েছে। - ব্ৰহ্মা। সর্বনাশ। এ যে অনাদিকালের ভূতভাবনের বেকার-সমস্যা। ইন্দ্ৰ। তাই তো বটে। ওরা বলছে, দেবতারা কোনোদিন কোনো কাজই করে নি। অতএব ওদের মজুরি বন্ধ। ব্ৰহ্মা। বলো কী, হােমানলের ঘূতটুকুও মিলবে না? ইন্দ্র। না পিতামহ। সেটা ভালেই হয়েছে—যে ঘূতের এখন চলতি সেটাতে অগ্নিদেবের অগ্নিমন্দ্যি হবার আশঙ্কা। : বৃহস্পতি। আদিদেব, এতদিন ছিলুম মানুষের অসংশয় বিশ্বাসে— অত্যন্তই নিশ্চিন্ত ছিলুম। এখন পণ্ডিতের দল মনোবিজ্ঞানের এক্কাগাড়িতে চাপিয়ে মানুষের মাথার খুলির একটা অকিঞ্চিৎকর কোটরে আমাদের ঠেলে দিয়েছে; সেখানে মগজের গন্ধ আছে, অমৃতের স্বাদ নেই; বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বেড়ার মধ্যে আমাদের ঘের দিয়ে দিয়ে রেখেছে— যাকে মেচ্ছভাষায় বলে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প— কড়া পাহারা! অবতারের যে পুরাতত্ত্ব বের করেছে, তাতে নৃসিংহের কোনো চিহ্ন নেই, আছে নৃবানরের মাথার খুলি। " মরুৎ। আমার পুত্র মারুতিকে ওরা অগ্রজ বলে স্বীকার করেছে এতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু লজ্জার বিষয় এই যে, দেবতারা ভুক্ত হয়েছে অ্যাভূপালজি নামক অর্বাচীন ম্লেচ্ছাশাস্ত্রের বাল্যলীলা পর্বে। দেব, আশা দিয়েছিলে আমরা অমর, আজ দেখছি। ওদের পরীক্ষাগারে ব্যাঙের একটা কাটা পাও ইন্দ্রপদের চেয়ে বেশি সজীব। সেদিন সুরবালকেরা সুরগুরুকে ধরে পড়েছিল, “প্ৰমাণ করে দিন আমরা আছি।” গুরুর সন্দেহে দোল লাগল- আছি কি নেই। এই তালে তার মাথা নড়তে লাগল, মুখ দিয়ে কথা বেরল না। পিতামহ যদি সন্দেহ ভঞ্জন করে দেন তা হলে দেবলোক সুস্থ হতে পারে। ব্ৰহ্মা। পিতামহের চার মাথা হােঁট হয়ে গেছে। মনে ভাবছি মরলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের আচার্য হয়ে যদি জন্মাতে পারি তা হলে অন্তত কোনো এক চৌমাথার ট্রাম লাইনের ধারে একটা পাথরের মূর্তি দাবি করতে পারব। আজ আমার মূর্তির ভাঙা টুকরো নিয়ে প্রফেসর তারিখ হিসাব করছে অথচ এতদিন এই বিশ্বাস দৃঢ় ছিল যে আমি সকল তারিখের অতীত। প্রজাপতি। ভগবান, সকলেই জানেন। ধরাধামে আমি আর কন্দৰ্পদেব অবতীর্ণ হয়েছিলুম শুভ এবং অশুভ বিবাহের ঘটকালিতে। সেজন্যে আমাদের কোনো রকমের নিয়মিত বা অনিয়মিত পাওনা ছিল না, কেবল নিমন্ত্রণাপত্রের মাথার উপরে ছাপার অক্ষরে আমার উদ্দেশে একটা নমস্কার স্বীকৃত ছিল। কিন্তু কৌতুক ছিল ভূরি-পরিমাণে। বাসর-ঘরে অনেকে কানমলা