পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুন্দর ২৩(৫ অমিতা। এখনো আমার মধ্যে যে রঙ লাগে নি। নুটু। কবে লাগবে? অমিতা। যখন তিনি আপন রঙে রঙিয়ে দেবেন। মঞ্জরী এসো, ধরে গান। যদি তারে নাই চিনি গো সে কি আমায় নেবে চিনে এই নব ফায়ুনের দিনে- জানি নে, জানি নে। সে কি আমার কুঁড়ির কানে কবে কথা গানে গানে, পরান তাহার নেবে কিনে এই নব ফায়ুনের দিনে জানি নে, জানি নে ৷ সে কি আপন রঙে ফুল রাঙাবে। সে কি মর্মে এসে ঘুম ভাঙবে। ঘোমটা আমার নতুন পাতার হঠাৎ দোলা পাবে কি তার, গোপন কথা নেবে জিনে এই নব ফাল্লুনের দিনে জানি নে, জানি নে ৷ অমিতা। কিন্তু সময় যে যায়। সুন্দর আসবেন কখন? এখনাে তো শূন্য রয়েছে আসন। ওলো কলিকা— ভৈরবীতে বেদনার সুর লাগিয়ে দে। নুটু। রানী, আজ আবার বেদনা কেন? আজ ভৈরবী থাক। — আজি সাহানা। অমিতা। প্রতীক্ষার চােখের জলে মন যখন খুব করে ভিজে যায় তখনি মিলনের ফুল সম্পূর্ণ করে ফুটে ওঠে। কালিকা, এইবার ওই গানটা “তোমায় চেয়ে আছি' বসে পথের ধারে সুন্দর হে। জমল ধুলা প্ৰাণের বীণার তারে তারে সুন্দর হে৷ নাই যে কুসুম, মালা গাঁথব কিসে! কান্নার গান বীণায় এনেছি যে, দূর হতে তাই শুনতে পাবে অন্ধকারে সুন্দর হে। দিনের পরে দিন কেটে যায় সুন্দর হে। মরে হৃদয় কোন পিপাসায় সুন্দর হে। শূন্য ঘাটে আমি কী-যে করি— রঙিন পালে কবে আসবে তরী, পাড়ি দেব কবে সুধারসের পরাবারে সুন্দর হে৷ অমিতা! না, শুধু অমন করে পথ চেয়ে বসে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে চলবে না। শীতের অরণ্য যেমন তার সমস্ত উৎসুক শাখা আকাশে তুলে ডাক দেয় তেমনি করে ডাকতে হবে। নুটু। রানী, অত বেশি ডাকাডাকি করে আনতে গেলে মান থাকে না। অমিতা। কী যে বলিস বসস্তিক, তার মানে নেই। নিজের মান নিয়ে করব কী! মান আমার ভেসে যাক-না, মান যেন তারি থাকে। নুটু। কিন্তু ডাকতে হয় কেন রানী বুঝতে পারি নে। যার দেবার সে অমনি দিয়ে যায় না কেন! অমিতা। সে যত বড়ো দাতাই হােক-না-কেন, সে তার সাধ্য নেই। ডাকতে পারি বলেই সে দিতে পারে। বন বৃষ্টিকে চায় বলেই মেঘ বৃষ্টি দিয়ে সার্থক হয়, মরুভূমিকে দিতে পারে এমন উপায় তার হাতে নেই। সে-কথা পরে হবে। এখন এসো তো তোমরা, শুধু গানের ডাক নয় নাচের ডাক ডাকো— কণ্ঠ দিয়ে অঙ্গ দিয়ে- দেহের সমস্ত রক্তে ডাকের ঢেউ উঠতে থাক— S আজি দখিন-দুয়ার খোলাএসো হে, এসে হে, এসে হে আমার বসন্ত এসে৷