পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NObr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নুটু। বিশ্বাস জোর করে তো হয় না। অমিতা। জোর চাই, জোর চাই। যে দুর্বল সে হাতে পেয়েও পায় না। এসো তো লতিকা, তােমার সেই সাহসের গান গাও। বলো, তোমার যদি আসতে দেরি থাকে, আমি এগিয়ে গিয়ে কবে তুমি আসবে বলে রইব না বসে, আমি চলাব বাহিরে। শুকনো ফুলের পাতা গুলি পড়তেছে খসে, আর সময় নাহি রে। বাতাস দিল দোল, দিল দোেল; ও তুই ঘাটের বাঁধন খোল, ও তুই খোলা। মাঝ-নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে তরী বাহিরে। আজ শুক্লা একাদশী, হেরো নিদ্রাহারা শশী ওই স্বপ্নপারাবারের খেয়া একলা চালায় বসি। তোর পথ জানা নাই, নাইবা জানা নাইও তোর নাই মানা নাই, মনের মানা নাইসবার সাথে চলবি রাতে সামনে চাহি রে। নুটু। কিন্তু রানী এখনো তো সাড়া পাচ্ছি নে। অমিতা। নিশ্চয় পাচ্ছি। বুঝতে সময় লাগে।— ভুল বুঝেই কত দিন কেটে যায়। নুটু। যদি ভুল বুঝি সে কি আমার দোষ? ভোলান কেন? অমিতা। ভুল ভাঙবার সুখ দেবেন বলে। ওই যে শুকনো পাতা ছড়িয়ে চলেছেন তুই শুধু কি তাই দেখবি। নুটু। যা চোখের সামনে দেখান। তাই দেখি। অমিতা। যা চোখের সামনে দেখান না, তাই আরো বেশি করে দেখবার। মন দিয়ে একবার চেয়ে দেখ— ঐ শুকনাে পাতার আবরণ এখনি খসবে- চিরনবীন ওরই আঁড়াল থেকে দেখা দেন। ওগো কিশোরের দল ধরে তো শুকনো পাতা কে যে ছড়ায় ওই দূরে উদাস করা কোন সুরে। ঘরছাড়া ওই কে বৈরাগী জানি না যে কাহার লাগি ক্ষণে ক্ষণে শূন্য বনে যায় ঘুরে ॥ চিনি চিনি যেন ওরে হয় মনে, ফিরে ফিরে যেন দেখা ওর সনে। ছদ্মবেশে কেন খেলো, জীর্ণ এ বাস ফেলো ফেলো প্রকাশ করো চিরনূতন বন্ধুরে৷ নুটু। রানী, ছদ্মবেশ ঘোচে, মায়া কাটে, দেখাও দেন। কিন্তু সব চেয়ে দুঃখ যে সম্পূর্ণ করে ধরা দেন না। অমিতা। এই তো প্রেমের খেলা। পাওয়া আর না পাওয়ার দােল- এই হল দােলপূর্ণিমার দোেল। সত্য আর মায়ার একসঙ্গে লীলা। নুটু। এমন লীলায় ফল কী!! অমিতা। যেদিন দিয়ে তিনি চলে চলে যান। সেই ব্যথার পথেই আমাদের এগিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান। সুমন, সুন্দরের বিদায়ের পালা এবার শুরু হােক। কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন দিয়ে যাও, শেষে দাও মুছে। ওহে চঞ্চল, বেলা না যেতে খেলা কেন তব যায় ঘুচে।