পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 ܓ݁ܶ “ওটা তো খাঁটি লেখকের লেখা নয়। ভিস্তির জলকে ঝরনার জল বলে না। সমাজের আবর্জনা বঁটাবার জন্যে কোমর বেঁধেছিলে। আন্দাজে চলে না ও কাজ। আবর্জনাও সত্যু হওয়া চাই আর বঁাটা-গাছটাও, সঙ্গে চাই ব্যবসায়ীর হাতটা।” পৃথীশ যখন একটা ঝকঝকে জবাবের জন্যে মনের মধ্যে হাতড়াচ্ছে এমন সময় বাঁশরি বললে, “শোনো পৃথীশবাবু, যাদের চেন না, তাদের চিনতে কতক্ষণ। আমরা তোমার ওই নলিনাক্ষের দল, আমাদের অপরাধ ঢ়ের আছে, যেমন তোমাদেরও আছে বিস্তর। ভালো করে জানা হলে মানুষকে ভালো লাগতে পারে মন্দ লাগতেও পারে, কিন্তু অদ্ভুত লাগে না।” “তোমাকে তো জেনেছি বাঁশি, কী রকম লাগছে তার প্রমাণ কিছু কিছু পেয়েছ বােধ করি।” “আমাকে কিছু জান না তুমি। আগে চেষ্টা করো আমার চারি দিককে জানতে।” ‘की टे०ोश ?” “উপায় আমিই ঠিক করে দেব।” সেই উপায়ের প্রথম আরম্ভ আজকের এই পাটিতে। সুষমার ছোটাে বোন সুষীমা, মাথায় বেণী দোলানো, বয়েস হবে তেরো, কঁচা মুখ, চােখে চশমা, চটপট করে চলে— পৃথীশকে এসে বললে, “চলুন খেতে।” পৃথীশ একবার উঠি-উঠি করলে, পর মুহূর্তে চেপে বসল শক্ত হয়ে। হিসেব করে দেখলে বিশ-পাঁচিশ হাত তফাতে আছে টেবিলটা, এণ্ডির চাদর দুলিয়ে যেতে হবে অনেক নরনারীর চোখের সামনে দিয়ে। ফস ক’রে মিথ্যে কথা বললে, “আমি তো এখন চা খাই নে।” সুষীমা ছেলেমানুষের মতো বললে, “কেন, এই সময়েই তো সবাই চা খায়।” পৃথীশ এই ছেলেমানুষের কাছেও সাহিত্যিকের চাল ছাড়তে পারলে না, মুখ টিপে বললে, “এক-এক মানুষ থাকে যে সবাইয়ের মতো নয়।” সুষীমা কোনো তর্ক না করে আবার বেণী দুলিয়ে চটপট করে ফিরে চলে গেল। সুষীমার মাসি অৰ্চনা দূর থেকে দেখলে। বুঝলে, যত বড়ো খ্যাতি থাক, লোকটির সেই লজ্জা প্ৰবল যেটা অহংকারের যমজ ভাই। ছোটো একটি প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিজের হাতে করে নিয়ে এল। সামনে ধরে বললে, “খবেন না, সেকি কথা পৃথীশবাবু, কিছু খেতেই হবে।” অন্তর্যামী জানেন খাওয়ার প্রয়োজন জরুর হয়ে উঠেছিল। প্লেটটা পৃথীশ কোলে তুলে নিলে। নিতান্ত অপর সাধারণের মতোই খাওয়া শুরু করলে। বেঞ্চির এক ধারে বসল। অৰ্চনা। দোহারা গড়নের দেহ, হাসিখুশি ঢলঢলে মুখ। বললে, “সেদিন আপনার ‘বেমানান' গল্পটা পড়লুম পৃথীশবাবু। পড়ে এত হেসেছি কী আর বলব।” যদি কোনােমতে সম্ভবপর হত ] তা হলে রাঙা হয়ে উঠত পৃথীশের মুখ। কান দুটাে বঁী কী করতে লাগল। একখানা কেকের উপর অত্যন্ত মনোযোগ দিলে মাথা নীচু করে। “আপনি নিশ্চয়ই কাউকে লক্ষ্য করে লিখেছেন। অমন অদ্ভুত জীবের নমুনা স্বচক্ষে নাদেখলে সাহস করে লেখা যায় না। ওই যো-জায়গায় মিস্টার কিষেণ গাপটা বি. এ. ক্যান্টােব পিছন থেকে মিস লেটিকার জামার ফাঁকে নিজের আঙটি ফেলে দিয়ে খানাতল্লাশির দাবি করে হােহা বাঁধিয়ে দিলে। আমার বন্ধুরা সবাই পড়ে বললে, সাহিত্যে এ জায়গাটা একেবারে यूट्र यातना गया डाल मिलता , পৃথীশবাবু। ভয় হয় আপনার সামনে . יין সিঙাড়ার গ্রাসটা কোনােমতে গলাধঃকরণ করে পৃথীশ বললে, “আমাদের দুজনের মধ্যে কে বেশি ভয়ংকর তার বিচার করুন বিধাতা পুরুষ।” . “না, ঠাট্টা করবেন না। আপনি ওস্তাদমানুষ, আপনার সঙ্গে ঠাট্টায় পারব না। সত্যি করে বলুন, এরা কি আপনার বন্ধু, নিশ্চয়ই এদের খুব আত্মীয়ের মতোই জানেন। ওই যে মেয়েটা, কী তার নাম, কথায় কথায় হাঁপিয়ে উঠে বলে, মই আইজ ও গড়, যে মেয়েটা লাজুক