পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नळष्ट्र लिशंन SCG উজ্জ্বল হয়ে উঠল সুষমার মুখ, যেন সে দৈববাণী শুনলে। মুক্তারামের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্ৰণাম করলে। চৌরঙ্গি অঞ্চলে বাঁশরিদের বাড়ি। সেখানে ওরা দুই অবিবাহিত ভাই থাকে। পাটনা অঞ্চলে থাকতে হয় বাপকে বেহার গবর্মেন্টের কোন কাজে। মা প্রায়ই থাকে তারই সঙ্গে, মেয়েকে রাখতে চায় কাছে, মেয়ে কলকাতা ছেড়ে যেতে নারাজ। পৃথীশকে বাঁশরি এত প্রশ্ৰয় দেয়, সেটা একেবারেই পছন্দ করে না ভাইরা। সবাই জানে বঁশিরির বুদ্ধি অসামান্য তীক্ষ্ম, মেয়েদের দিক থেকে সেটা একেবারেই আরামের নয়, তা ছাড়া ওর অধিকাংশ সংকল্প দুঃসাহসিক হিংস্র প্রাণীর মতো, শুধু যে লম্বা লাফ দিতে পারে তা নয়, সঙ্গে থাকে প্রচ্ছন্ন কোষে তীক্ষ নখর। ওর ভাইরা সুযোগ পেলেই পৃথীশের চেহারা নিয়ে, লেখা নিয়ে ঠাট্টা করে, কিন্তু এ বাড়িতে যাতায়াতের বাধা দেবার আভাসমাত্র দিতে সাহস পায় না। পৃথীশ জানে এদের ঘরে তার প্রবেশ অনভিলষিত। তাই নিয়ে ওখানকার দ্বারী থেকে আরম্ভ করে সমস্ত পুরুষ অধিবাসীর কাছে ওর সংকোচ ভাঙতে চায় না— ও কেবলই মনে করে, ওর আদ্যোপােন্ত সমালোচনা করে সবাই, বিশেষত কপালের সেই দাগটার। এদের বাড়িতে অন্য যেসব অভ্যাগতদের আসতে দেখে, তারা সাজে সজ্জায় ভাবে ভঙ্গিতে ওর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র শ্রেণীর মানুষ। ও চেষ্টা করে নিজেকে বােঝাতে যে ওরা ডেকোরেটেড ফুলস, কিন্তু সেই স্বগতোক্তিতে লজ্জা চাপা পড়ে না। ও যখন দেখে অন্যরা এখানে আসে স্বাধিকারের নিঃসংকোচে তখন আপনি সাহিত্যিক আভিজাত্যবোধকে মনে মনে সবলে স্ফীত করে তুলেও নিজেকে ওদের সমান বহরে দাঁড় করাতে পারে না। সেটা বোঝে বাঁশরি এবং এও বোঝে যে বাঁশরির দিকে ওর আকর্ষণ প্রতিদিন প্রবল হয়ে উঠছে অন্তত তার একটা কারণ এই শ্রেণীগত দুরধিগম্যতা। বাঁশরির সামীপ্যে। ওর মনে একটা অহংকার জাগে, ইচ্ছে করে দেখুক সব বাইরের লোকে। এই অহংকারটা ওর পক্ষে লজ্জার কারণ। তা জেনেও পারে না। সামলাতে। একটা কথা বুঝে নিয়েছে বাঁশরি যে, ওদের বাড়িতে হেঁটে আসতে বাধে পৃথীশের। যখন দরকার হয় নিজের গাড়ি পাঠিয়ে দেয় ওকে আনতে। অর্থাভাবগ্ৰস্ত পৃথীশ শোফারকে মোটা বকশিস দিতে ভোলে না। আজ শৌখিনমণ্ডলীর দিনারম্ভে অর্থাৎ বেলা আটটায় গাড়ি পাঠিয়েছিল বাঁশরি। সেদিন পৃথীশের হল অকালবােধন। তারও দিনগণনা হয় পূর্বাস্তুের প্রথম কাটা ঘণ্টা বাদ দিয়ে। বাঁশরির ভাইরা তখন বিছানায় শুয়ে আধ-মেলা চােখে চা খাচ্ছে। সূর্যের যেমন অরুণ সারথি, ওদের জাগরণের তেমনি অগ্রদূত গরম চায়ের পেয়ালা। পৃথীশ যখন এল বাঁশরির চুলবাঁধা তখন শিথিল, মুখ ফ্যাকাসে, আটপৌরে শাড়ি, পায়ে ঘাসের জাপানি চটি৷ মুগ্ধ হল পৃথীশের মন, অসজ্জিত রূপের মধ্যে অন্তরঙ্গতা আছে, তাতে দুরু দুরু কঁপিয়ে দিল ওর বুকের ভিতরটা। ইচ্ছে করতে লািগল মরীয়া হয়ে দুঃসাহসিক কথা একটা কিছু বলে ফেলে। মুখে বেধে গেল, শুধু বললে, “বাঁশি, আজ তোমাকে দেখাচ্ছে সকালবেলাকার অলস চাদের মতো।” বঁশিরির স্পষ্ট করে বলতে ইচ্ছে করছিল “অকরুণ বিধাতার শাপ তোমার মুখে। মুগ্ধ দৃষ্টি তোমাকে মানায় না। দোহাই তোমার, গদগদ ভাবটা রেখে দিয়ে আপন নির্জন ঘরের বিরহের জন্য জমিয়ে।' পৃথীশের মুখের পর চােখ রাখা বাঁশরির পক্ষে অনেক সময় অসম্ভব, বিশেষত যখন সেই মুখে কোনো আবেগের তরঙ্গ খেলে, হয় দুর্নিবার হাসি পায়, নয়। ওকে পীড়িত করে। পৃথীশের ভাবােচ্ছাস থামিয়ে দিয়ে বাঁশরি বললে, “কাজের কথার জন্যে ডেকেছি, অন্য অবাস্তর কথার প্রবেশ স্ট্রিক্টলি প্রেহিবিটেড” পৃথীশ ক্ষুন্ন হয়ে বললে, “জরুরি কথা এত কী আছে|” । “জরুরি ময়। এই বুঝি তুমি আর্টিস্ট। নিজের চক্ষে দেখলে আসন্ন ট্র্যাজেডির প্রলয় সংকেত এখনাে রঙের তুলি বাগিয়ে ধরতে মন ছট্‌ফট্‌ করছে না? আমার তাে কাল সারারাত ঘুম হল