পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SやO রবীন্দ্র-রচনাবলী লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা- তোমাদের তিনজনের সামনেই এই অপমান। মুছে ফেলব লজ্জা, এর চিহ্ন থাকবে না। চললুম।” সন্ধেবেলায় কোনো একটা উপলক্ষে সানাই বাজছে সুষমাদের বাড়িতে। বাঁশরি তখন তার একলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে পড়ছে একটা খাতা নিয়ে। শেষ হয়ে গেছে পৃথীশের লেখা গল্প। নাম তার, ভালোবাসার নীলাম’। নায়িকা পঙ্কজ কেমন করে অর্থালাভে দিনে দিনে সার চন্দ্ৰশেখরের মন ভুলিয়ে তাকে আয়ত্ত করলে তার খুব একটা টকটকে ছবি, সুনিপুণ তন্নতন্ন তার বিবরণ। দুই নম্বরের নায়িকা দীপিকা নির্বোিধকে উদ্ধার করবার চেষ্টা করছে প্ৰাণপণে, শেষকালে কী অসহ্য ঘূণা, কী বুকফাটা কান্না। ছুটে বেরোলে আত্মহত্যা করতে, শীতকালে জলে পা দিতে গিয়েই হঠাৎ কঁপুনি দিয়ে শীত করে উঠল, কিংবা হঠাৎ মনে সংকল্প এল বেঁচে থেকেই শেষ পর্যন্ত ওদের দুজনকে জুলিয়ে পুড়িয়ে মারবে। দ্বিধার এই দুটা কারণের মধ্যে কোনটা সত্য সেটা কৌশলে অনিশ্চিত রাখা হয়েছে। পৃথীশ কখন এক সময় পা টিপে টিপে একটা চেয়ারে এসে বসেছে পিছন দিকে। বাঁশরি জানতে পারে নি। পড়া হয়ে যেতেই বঁশরি খাতাখানা যখন ধাপ করে ফেললে টেবিলের উপর— পৃথীশ সামনে এসে বললে, “কেমন লাগল। মেলোড্রামার খাদ মিশেই নি এক ধ্ৰুংলিগােল্টর তরল ক চ যারা তালে পরে নির্মল প্ৰকাশ, একবার র সত্য।” বাঁশরি বললে, “কেমন লাগল ? এই দেখিয়ে দিচ্ছি।” বলে পাতাগুলো ছিড়তে লাগল একটার পর একটা। পৃথীশ বললে, “করলে কী? আমার সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লেখা নষ্ট করলে, ७ों अन।" “কী দাম চাই?” “তোমাকে।” “আমাকে ? নিতে সাহস আছে তোমার ?” “আছে।” “সেন্টিমেন্ট এক ফোটাও থাকবে না।” “নেই রইল।” “নির্জলা একাদশী, নিষ্ঠুর সত্য।” “আচ্ছা, রাজি? দেখো, নভেল লেখা নয়, সত্যিকার সংসার।” “শিশু নই। আমি, এ কথা বুঝি।” ::- “না মশায়, কিছু বোঝা না। বুঝতে হবে দিনে-দিনে পলে-পলে, বুঝতে হবে হাড়ে-হাড়ে।” নািহ আমার উৎসৰ স্ৰ চয় হলে অভিজ্ঞতা। আমাক ভর খেতে পারবেন \ יץ − ‘সত্যি কথা বলি। এত দিন তোমাকে কাছে কাছেই দেখলুম, বুদ্ধি তোমার পকে নি, তাই কেবলই ধার করে করে কাজ চালাও। মেয়েদের সম্বন্ধে বইপড়া কথা অনেক শুনেছি তোমার মুখে। একটা কথা শুনে রাখো, যারা অবুঝ তাদের উপর মেয়েদের খুব একটা টান আছে, যেমন মমতা রোগাদের 'পরে। ওদের ভার পেলে মেয়েদের বেকার দশা ঘোচে। তোমার উপর আমার সত্যিকার মেহ জন্মেছে। এতদিন তোমাকে বঁচিয়ে এসেছি তোমার নিজের নিবুদ্ধিতা আর বাইরের বিরুদ্ধতা থেকে। সেইজন্যে যে সর্বনেশে প্রস্তাব এইমাত্র করলে সেটাতে সম্মতি দিতে আমার দয়া হচ্ছে।” ।