পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ললাটের লিখন । SVが> ‘সম্মতি যদি না দাও তা হলে যে নির্দয়ত হবে তার তুলনা নেই।” “না, মেলোড়ামা নয়।” “আজি না হােক কাল মেলোড়ামা হয়ে উঠবে না ?” “যদি কোনোদিন হয়ে ওঠে। তবে ওই খাতার মতো দিনগুলোকে নিজের হাতে ছিড়ে ছিড়ে ফেলে দিয়ে।” পৃথীশ ওর দিকে লাফ দিয়ে এল। বাঁশরি পিছু হঠে গিয়ে বললে, “এখনি শুরু হল! এখনো ভালো করে ভেবে দেখো- পিছোবার সময় আছে।” পৃথীশ হাত জোড় করে বললে, “মাপ করো আমাকে। ভয় হচ্ছে পাছে তোমার মত বদলায়।” “বদলাবে না। অমন করে মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে না। যাও রেজিষ্টারের আপিসে। যত শীঘ্র পার বিয়ে হওয়া চাই। নিমন্ত্রণের চিঠি ছাপতে দিয়ে আজই।” “অনুষ্ঠান কিছু হবে না?” “কিছু না, একেবারে নির্জলা একাদশী।” ‘কাউকে নিমন্ত্রণ ?” “কাউকে না।” “কাউকেই না?” “আচ্ছা, সোমশংকরকে। আর-একটা কথা বলি, গল্পটার কপি নিশ্চয় আছে তোমার ডেস্কে, সেটা পুড়িয়ে ফেলো, নইলে শান্তি পাবে না। আমার হাতে।” পরের দিন সোেমশংকর এল। বঁশি বললে, “তুমি যে ” “নিমন্ত্রণ করতে এসেছি। জানি অন্য পক্ষ থেকে তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে না। কিন্তু আমার দিক থেকে কোনো সংকোচ নেই।” “কোন নেই?” “একদিন আমি তোমাকে যা দিয়েছি আর তুমি আমাকে যা দিয়েছ এ বিবাহে তাকে কিছুমাত্র স্পর্শ করবে না তা তুমি জািন।” “তবে বিবাহ করতে যােচ্ছ কেন?” । “সে কথা বুঝতে যদি নাও পাের, তবু আমার উপর দয়া কোরো।” “নাই-বা বুঝলুম, তুমি বলো।” “সন্ন্যাসীর কাছ থেকে যে ব্ৰত নিয়েছি বোঝাতে পারব না সে, আমার ভালোবাসার চেয়ে বড়ো। তাকে সম্পন্ন করতেই হবে বঁচি, আর মরি।” “আমাকে সঙ্গে নিয়ে সম্পন্ন হতে পারত না?” “যদি পারত। তবে বাধা ঘটত না। তুমি নিজেকে ভুল বােঝাও না, তাই জানি, তুমি নিশ্চিত জানো তোমার ভালোবাসা টলিয়ে দিল আমাকে আমার কেন্দ্র থেকে। তোমার কাছে আমি দুর্বল। যে দুঃসাধ্য কর্মে সুষমার সঙ্গে সন্ন্যাসী আমাকে মিলিয়েছেন, সেখানে আমাদের বিচলিত হবার অবকাশ নেই। সেখানে ভালোবাসার প্রবেশপথ বন্ধ।” অশ্রু গোপন করার জন্যে চােখ নিচু করে বাঁশরি বললে, “এখনাে সম্পূর্ণ করে বলো নি, কেন এলে আজ আমার এখানে ?’ “আমার ভালোবাসার কিছু চিহ্ন রেখে যাচ্ছি। তোমার কাছে, ফিরিয়ে দিতে পারবে না।” ডুব সাঁতার দিয়ে জল থেকে তুলে এনেছিল, সেই কাষ্ঠী, সেই ব্রেসলেট, সেই ব্রোচ। ধরলে