পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 28\ܔ তার মায়ের চোখে জল দেখেছিল। সে কথা কোনোদিন সে ভুলতে পারে নি। সেদিন থেকে তার মনে এই প্রতিজ্ঞা ছিল, যে, বড়ো হয়ে সে তার মায়ের দুঃখ এবং অসম্মান দূর করবে। দিন রাত্রি একমনে সে পড়া করে, আর বৎসরে-বৎসরে পরীক্ষায় সে পুরস্কার পায়। ক্লাসে অক্ষয় ছিল সবপ্রথম। মণীন্দ্রের বুদ্ধি তার চেয়ে বেশি ছিল কিন্তু পরীক্ষায় কোনোদিন তাকে অতিক্রম করতে পারে নি। : এ বৎসর পরীক্ষার সময় উপস্থিত হল। মণীন্দ্ৰ অন্যসকল বিষয়েই ভালো উত্তর দিয়েছিল, অক্ষয় তার সঙ্গে এক জায়গাতেই পরীক্ষা দিতে বসেছে। একটার সময় জলখাবারের আধঘণ্টা ছুটি ছিল। অক্ষয় দ্রুত পরীক্ষার উত্তর লেখা শেষ করে একটার কিছু আগেই বেরিয়ে গেল। ডেস্কের উপর ছিল তার কাগজগুলি। মণীন্দ্র তার থেকে দুখানা কাগজ চুরি করে নিয়ে চলে গেল, কেউ জানতে পারল না। ’ এবার অক্ষয়ের পরীক্ষার ফল ভালো হল না। সে বৃত্তি পাবে নিশ্চিত আশা করে ছিল কিন্তু যখন পেল না তখন সকলেই বিস্মিত হল। এবার মণীন্দ্র পেলে পুরস্কার। তার পিতা দিব্যেন্দু। সকলের চেয়ে আশ্চর্য হলেন। কেন যে এমন হল তার কারণ বুঝতে পারলেন না। : হঠাৎ একদিন বুঝতে পারলেন। মণীন্দ্রের পড়বার ঘরে তার দেরাজের মধ্যে অক্ষয়ের হাতের লেখা দুখানা পরীক্ষার পত্র দিব্যেন্দুর হাতে পড়ল। মণীন্দ্র তার দুষ্কর্মের কথা স্বীকার করলে | বিদ্যালয়ে প্রাইজ দেবার দিন উপস্থিত হল। প্রথম প্ৰাইজের জন্যে মণীন্দ্রের ডাক পড়ল। সে প্রাইজ হাতে নিয়ে বললে, “এ আমার প্রাপ্য নয়—এ প্ৰাইজের [ অধিকার । অক্ষয়ের। আমি অপরাধ করেছি।” । - বাড়ি এসে দিব্যেন্দু মণীন্দ্রকে বললেন—“যে-অপরাধ করেছ তার দণ্ড তোমার শোধ হয় নি। মণীন্দ্রের [ অক্ষয়ের } ছাত্রবৃত্তি মাসিক পনেরো টাকা নিজে থেকে তোমার দেওয়া চাই।” মণীন্দ্র ভেবে পেল না। কী উপায়ে সে দিতে পারে। দিব্যেন্দু বললেন, “এক বৎসর তোমাকে পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হবে। গাড়িঘোড়ার যে খরচ প্রতি মাসে লাগে তারি থেকে অক্ষয়ের বৃত্তির টাকা শোধ হতে পারবে।” S \, S8