পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ (ሰ ዓ যাহারা মানবজীবনের ভিতরের দিকে তাকায় না, যাহারা বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে শুভদৃষ্টিবিনিময় না করিয়া ব্যস্তভাবে ব্যবসায় চালাইয়া যায় বা অলসভাবে দিনক্ষয় করিতে থাকে, পৃথিবীর সঙ্গে তাহদের সম্বন্ধসূত্র কতই ক্ষীণ। তাহারা চলিয়া গেলে কতটুকু স্থানেই বা শূন্যতা ঘটে! কিন্তু মহিতচন্দ্র বালকের মতো নবীনদৃষ্টিতে, তাপসের মতো গভীর ধানযোগে এবং কবির মতো সরস সহৃদয়তার সঙ্গে বিশ্বকে গ্রহণ কবিয়ছিলেন, তাই আষাঢ় যখন এই নবgণশ্যামল মাঠের উপরে ঘনীভূত হইয়া উঠে এবং মেঘমুক্ত প্ৰাতঃকাল যখন শলিতারুশ্রেণীর ছায়বিচিত্র বীথিকার মধ্যে আবির্ভূত হয়, তখন মনে বলিতে থাকে, পৃথিবী হৈঁতে একজন গেছে, যে তোমাদের বর্ষে সৰ্থে অভ্যর্থনা করিয়েছে, যে তোমাদের ভাষা জনিত, তোমাদের বার্তা বুঝিত; তোমাদের লীলাক্ষেত্রে তাহার শূনা আসনের দিকে চাহি; তোমরা তাহাকে আর খুজিয়া পাইবে না।-- সে ! তোমাদের দিকে আজ তাহার প্রতি কোমল ভক্তিরসাদ্র অন্তঃকরণকে অগ্রসর করিয়া ধরে নাই, এই বিযদি যেন সমস্ত আলোকের বিষাদ, সমস্ত আকাশের বিষাদ।। সকলপ্রকার সৌন্দর্য, ঔদার্য ও মহত্ত্ব যে হৃদয়কে বারংবার স্পািদত-উদবোধিত করিয়াছে, সাম্প্রদায়িকতা যাহাকে সংকীর্ণ করে নাই এবং সাময়িক উত্তেজনার মধ্যে চিরস্তানের দিকে যে লক্ষ্য স্থির রাখিয়াছে, আমাদের সকল সৎসংকল্পে, সকল মঙ্গল-উৎসবে, সকল শুভ পরামর্শে আজ হইতে তাহার অভাব দৈন্যস্বরূপে আমাদিগকে আঘাত করিবে। উৎসাহের শক্তি যাহাদের পক্ষে স্বাভাবিক, আনুকূল্য যাহাঁদের নিকট হইতে সহজে প্রবাহিত হয়, যাহারা উদার নিষ্ঠার দ্বারা ভূমীর প্রতি আমাদের চেষ্টাকে অগ্রসর করিয়া দেয় এবং সংসারপথের ক্ষুদ্রতা উত্তীর্ণ করিয়া দিবার যাহারা সহায় হইতে পারে— এমন বন্ধু কয়জনই বা আছে! দুই বৎসর হইল, ১২ ডিসেম্বর মোহিতচন্দ্ৰ তাহার জন্মদিনের পরদিনে আমাকে যে পত্র লিখিয়ছিলেন, তাহারই এক অংশ উদ্ধৃত করিয়া লেখা সমাপ্তি করি। — আজকাল সকালে-সন্ধ্যায় রাস্তার উপর আর বাড়ির গায়ে যে আলো পড়ে, সেটা খুব চমৎকার দেখায়। আমি কাল আপনাদের বাড়ির পথে চলতে চলতে স্পষ্ট অনুভব করছিলাম যে, বিশ্বকে যদি জ্ঞানের সৃষ্টি বলা যায়, তবে সৌন্দর্যকে প্রেমের সৃষ্টি বললে কিছুমাত্র অত্যুক্তি হয় না। আমাদের পাঁচটি ইন্দ্ৰিয় দিয়ে যে ভাবগুলো মনের ভিতর প্রবেশ করে, আমাদের প্রজ্ঞাজাত সংস্কারগুলি সেগুলিকে কুড়িয়ে-নিয়ে এই বিচিত্র সুসংহত বিশ্বরূপে বেঁধে দেয়। এ ?দি সত্যু হয় তবে যে-সৌন্দর্য আমাদের কাছে উদ্ভাসিত, সেটা কত না ক্ষুদ্র-বৃহৎ নিঃস্বর্থ‘शिंगा সুখের সমবেত श्रृि ! association কথাটার বাংলা মনে আসছে না, কিন্তু একমাত্র প্রমই যে এই ॥২৯ociation-এর মূল, একমাত্র প্রেমই যে আমাদের সুখের মুহূর্তগুলোকে যথার্থভাবে বাধতে পারে, আর তা থেকে অমর সৌন্দর্য উৎপাদন করে, তাতে সন্দেহ হয় না। আর যদি সৌন্দর্য প্রেমেরই সৃষ্টি হল, তবে আনন্দও তাই-– প্রেমিক না হলে কেই বা যথার্থ আনন্দিত হয়! এই সৌন্দর্য যে আমারই প্রেমের সৃষ্টি, আমার শুষ্কতা যে একে নষ্ট করে— এই চিস্তার ভিতর আমার জীবনের গৌরব, আর দায়িত্বের গুরুত্ব একসঙ্গে অনুভব করি। যিনি ভালোবাসার অধিকার দিয়ে আমার কাছে বিশ্বের সৌন্দর্য, আর বন্ধুর গ্ৰীতি এনে দিয়েছেন, তীকে ধন্যবাদ দিই; আর শুধু আমারই শুষ্কতা-অপরাধের দরুন আমি যে আনন্দ হতে বঞ্চিত হই, এ কথা নতমস্তকে স্বীকার করি।” বঙ্গদর্শন s図q >○○