পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী م\۹ه তাহাকে শ্রদ্ধা করেন এমন সব লোকের নিকট আজ উপস্থিত হইতেছি, এবং আশা করিতেছি। যে এ বিষয়ে সকলেই আমাদের মুক্তহস্তে দান করিয়া সাহায্য করবেন। প্রবাসী TIRRA SOdo পরলোকগত পিয়র্সন এই আশ্রমের ছাত্র অধ্যাপক বন্ধু একে একে অনেকেই এখান থেকে চলে গেছেন, আজ তাদের সকলকে স্মরণ করতে হবে। আজ তারা অন্য প্রবেশপথ দিয়ে চিরস্তানের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, তারা অমৃতলোকে প্রবেশ করেছেন। আজ আমরা যেন তাদের মধ্যে নিত্যস্বরূপের পরিচয় পাই। যে-সব ছাত্র এখানে থেকে কিছু নেবার জন্য এসেছিল। সেই নেওয়ার আনন্দের মধ্যেই তারা একটি বড়ো জিনিস। এখানে রেখে গেছে। শিশু যেমন পৃথিবীতে মাতৃস্তন্যের ভিক্ষু হয়ে আসে আর তাদের সেই ক্ষুধার আবেদনের দ্বারাই এবং মাতৃস্নেহের দানকে সহজ আনন্দে গ্রহণ করার দ্বারাই মাতার স্বরূপকে সহজ করে দেয় তেমনি যে-সব ছাত্র এখানে আশ্ৰম-জননীর কাছ থেকে সূর্যোদয়ের আলোক-বাণী শুনেছে, অমৃতঅন্নের দান গ্রহণ করেছে তাদের সেই দান গ্রহণের সহজ আনন্দের দ্বারাই এখানকার আশ্রমের সত্যটি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুষ্ক ভূমিতে যখন বর্ষণ হয় তখন সেই ভূমি আবার বারিধারাই ফিরিয়ে দেয় না, কিন্তু তার শ্যামল সফলতার দ্বারাই সেই দানের প্রতিদান করে— আর এই দেওয়া-নেওয়ায় আকাশ-ধরণীর মিলন সার্থক ও সুন্দর হতে থাকে। যে-সব ছাত্র এখানে এসেছিল, আর প্রাণপ্রবাহের কল্লোলে আশ্রম মুখরিত করে তুলেছিল তারা যদি জীবনযাত্রার পাথেয়াস্বরূপ এখন থেকে কিছু আহরণ তাদের তেমন নয়। যেমন এই আশ্রমের। যে-সন্তান প্রবাসে চলে গেছে, যদিচ মাতার সেবার পরে আর তার নির্ভর থাকে না। তবু মাতার অন্তরের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় না, কেননা মাতার জীবনের মধ্যে গভীরভাবে সেই সন্তানের জীবন মিলিত। তেমনি যে-সকল ছাত্র ইহলোক থেকে চলে গেছে তারাও আশ্রমের জীবনভাণ্ডারে তাদের জীবনের দান রেখে গেছে, এই আশ্রমের সৃষ্টিকার্যে তারা মিলিত হয়ে গেছে, এইজনে তারা চলে গেলেও তাদের সঙ্গে আশ্রমের বিচ্ছেদ ঘটে না। সেই-সকল এবং পরলোকগত অধ্যাপক বন্ধুদের আজ আমরা স্মরণ করি। কিন্তু আমাদের যে বন্ধুর আগমনের জন্যে আমরা কিছুকাল ধরে প্রতীক্ষা করছিলুম, কিন্তু যাঁর আর আসা হল না সেই অকাল-মৃত্যুগ্রস্ত আমাদের পরম সুহৃৎ পিয়ার্সনের কথা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করার দিন। তিনি চলে যাওয়ায় ক্ষতির কথা কিছুতে আমরা সহজে ভুলতে পারি নে। কিন্তু তীকে কেবল এই ক্ষতির শূন্যতার মধ্যে দেখলে ছোটাে করে দেখা হবে। আমাদের যে ধন বাইরের জিনিস বাইরে থেকে যাবামাত্রই তার ক্ষতি একান্ত ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু যার জীবন নিজের আমি-গণ্ডিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যিনি কেবল নিজেরই মধ্যে বেঁচে ছিলেন না মৃত্যুর দ্বারা তার বিনাশ হবে কী করে? এই বন্ধটির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ইংলন্ডে। যেদিন তার বাড়িতে প্ৰথম যাই সেদিন গিয়ে দেখি যে দরজার কাছে সেই সীেমামূর্তি প্রিয়দর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আমাকে দেখে অবনত হয়ে আমার পায়ের ধূলা নিলেন। আমি এমন কখনো প্রত্যাশা করি নি, তাই চমকে গেলুম। আমি তীর সেই নাতি-স্বীকারের যোগ্য না হতেও পারি, অর্থাৎ এর দ্বারা আমার কোনো পরিচয় আমি দাবি করি নে কিন্তু এর দ্বারা তারই একটি উদার পরিচয় পাওয়া যায়- সেটি হচ্ছে এই যে, তার আত্মা ইংরাজের রাষ্ট্ৰীয় প্রতাপের বেড়াটুকুর মধ্যে বাধা ছিল না, ন্যাশানালিজমের বিরাট অহমিকায় তাকে পেয়ে বসে নি, নিখিলমানবের পৃথিবীতেই তাঁর স্বদেশ