পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ Գ Գ ছিল। সেদিন তার স্বজাতীয় অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হয়তো তারা কেউ কেউ মনে করে থাকবেন। এতে রাজ-সম্মানের হানি করা হল। কারণ তঁদের প্রত্যেকেরই ললাট ইংরেজের ব্লাজটিকা বহন করছে। বাহ্যত সেই ললাট ভারতীয়ের কাছে নত করা রাজশক্তির অসম্মান করা। কিন্তু ইংরেজের রাজশক্তিতে পিয়ার্সন কোনো দিন আপন অধিকার দাবি করেন নি। এমনিভাবে আমাদের প্রথম পরিচয়ের সূত্রপাত। তারপর যখন তিনি প্রথমে শান্তিনিকেতনে এলেন তখন বাইরের দিক থেকে আমরা তাকে কীইবা দেখতে পেরেছিলুম? আমার ইস্কুল ছিল অতি সামান্য, তার এমন ধনাগৌরব ছিল না যে সাধারণ লোকের প্রশংসা আদায় করতে পারি। আমার দেশের লোক আমার এই কাজকে তখন স্বীকার করে নি। বাইরের প্রাঙ্গণে তখন এর আলো জুলে নি। কিন্তু তিনি এর ভিতর মহলের একটি আলো দেখতে পেয়েছিলেন, তাই সেই আলোকের কাছে তার জীবনের দীপকে জুলিয়ে উৎসর্গ করে দিতে তাঁর আনন্দ বোধ হয়েছিল। বাহিরের সমারোহের জন্যে তাকে এক-মুহূর্ত অপেক্ষা করতে হয় নি। আমি জানি তাকে কলেজের প্রিন্সিপাল করবার জন্য কেহ কেহ। পীড়াপীড়ি করেছিল, কিন্তু তিনি উচ্চ বেতনের পদের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি তঁর জীবন যৌবন আরাম অবকাশ সমস্তই একে নিঃশেষে দিয়েছেন। ইংরেজের প্রভুত্বমর্যাদা তার ছিল- দাবি করেন নি; ভোগ করবার নবীন বয়স ছিল— ভোগ করেন নি; দেশে মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন ছিল— তাদের সঙ্গ ও সেরা ছেড়ে এসেছেন; নগ্ন পদে ধূতি জামা পরে বাঙালির ছেলের মতো থেকে এই আশ্রমের সেবা করে গেছেন; মুহূর্তকালের জন্য দুঃখ পরিতাপ বোধ করেন নি। তিনি মনে করতেন যে এই পরম সুযোগ লাভ করে তিনি ধন্য হয়েছেন। এর জন্য fts < Taf FC G3 (R(Sir Ti ŠK Shauntiniketan the Bolpur School đềRif (iš জানা যায়। পিয়ার্সন সাহেব, তার “আপন আস্তরিক মহত্ত্বাবশতই সাধনার মধ্যেই মহত্ত্বের আবির্ভাবকে সুস্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন। আমরা যখন এত বড়ো মহৎ দান পেয়ে থাকি তখন আমাদের একটি খুব বড়ো বিপদের আশঙ্কা থাকে; সে হচ্ছে পাছে আমরা ভিক্ষুকের মতো দান গ্রহণ করি। ভিক্ষু যখন দান পায় তখন দানটাকেই সে যাচাই করে থাকে, জানতে চায় বাজারে তার মূল্য কত। দাতা তার কাছে গীেণ। দানের দ্বারা দাতা নিজের কত বড়ো পরিচয় দিলে সেটাকে সে তার ব্যবহারের পক্ষে আবশ্যক মনে করে না। এমন-কি, তার দাবির মহিমাকেই সে বড়ো করতে চায়, মনে করতে চায় দান প্ৰাপ্তিতে তার অধিকার আছে। এতে কেবল এই বোঝায় যে, আসল জিনিসটা নেবার শক্তি ভিক্ষুকের নেই। তাই আমাদের পরলোকগত বন্ধু বাইরের কাজ কতটুকু দেখিয়ে গেছেন, তাতে আমাদের কী পরিমাণ লাভ হয়েছে তারই হিসাব নিকাশ করে তার বিচার করলে চলবে না। তিনি তার অর্ঘ্য সাজিয়ে দিয়ে গেছেন এটা বড়ো কথা নয়, কিন্তু তিনি তীর আত্মত্যাগকে দিয়ে গেছেন এইটেই মানুষের পক্ষে সকলের চেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদই আমাদের চরম সার্থকতার দিকে নিয়ে যায়; আমাদের অন্তরের মধ্যে এরই অভাব সকলের চেয়ে বড়ো দারিদ্র্য। এই আত্মত্যাগ যিনি দান করেন তার দানকে আমরা যদি সত্যভাবে গ্ৰহণ করিতে পারি, তা হলে আমাদের আত্মা শক্তি লাভ করে। আমার কথা ও কাহিনী'র প্রথম কবিতায় এই কথাটাই আছে। তখন ধনীরা তার কাছে মূল্যবান দানসামগ্ৰী এনে দিলে, তিনি বললেন, হল না। কেননা সেই দানে ধন ছিল কিন্তু আত্মা ছিল না। দরিদ্র নারী যখন তার একমাত্র গায়ের বসন দিল তখন তিনি বললেন পেয়েছি, কেননা সেই অনাথা ধন দিতে পারে নি, কিন্তু আত্মত্যাগের দ্বারা আত্মকে দিয়েছে। পরমভক্ষু আমাদের কাছে সেই আত্মার অর্ঘ্য চান— যারা দিতে পারেন তীরাই ধন্য- কারণ তাদের সেই নৈবেদ্য, দেবতার ভোগের সামগ্ৰী, সমস্ত মানুষের পক্ষে