পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ % እ: জানতেই পারবে না, উপকার করবে। কী! কারণ সেই রকম উপকারের দ্বারা ফল পেতে চায়সে ফল তাদের মনের মতো। কিন্তু যারা মানবপ্রেমের টানে ভারতের কাছে আপনাকে দিতে চায় তারা সেই দেওয়ার দ্বারাই ভারতের সত্যকে জানতে পারে। তাদের প্রেম শুধু দেয় না, পায়। না পেলে দেওয়াই যায় না। যারা জীবনের ক্ষেত্রে সেবা করতে, আপনাকে দান করতে আসেন তারা আবিষ্কার করেন যে তারা যা দিচ্ছেন তার চেয়ে বড়ো জিনিস। তঁরা পেয়ে যাচ্ছেন। পিয়ার্সন সাহেব তাই বলতেন যে-— আমি যা পেয়েছি তার জন্য বড়ো কৃতজ্ঞ হলুম। আমরা আশ্রমবাসীরা যেন সেই বন্ধুকে পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারি। এখানকার ছাত্র অধ্যাপক যাঁরা তাঁর বন্ধুত্বের ও প্রেমের আম্বাদ পেয়েছেন তীরাই জানেন যে কী পবিত্র দান তিনি চারিদিকে রেখে গেছেন। তিনি এখানকার সাঁওতালদের একমাত্র বন্ধু ছিলেন, নিজে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করেছেন। আজ সেই-সব সাঁওতালরাই জানে যে কী সম্পদ তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি এই সাঁওতালদের আর আশ্রমের শিশুদের সেবা করতে গিয়ে যে মহাসম্পদ লাভ করেছেন তা অতি মহামূল্য, তা সস্তায় পাওয়া নয়। তিনি সমস্ত দান করে তবেই সমস্ত গ্রহণ করতে পেরেছেন, জীবনের পাত্রকে পূর্ণ করে নিয়ে গেছেন। তিনি তাঁর মহৎজীবনকে পরিপূর্ণ করে সেই দান গ্রহণ করেছেন। তাঁর জীবনের পত্র তাতে ভরপুর হয়ে উপছে পড়েছে, তিনি তার আনন্দে অধীর হয়েছেন। আজ আমাদের তীর জীবনের এই কথাই স্মরণ করতে হবে তিনি যেমন বড়ো দান রেখে যেতে পেরেছেন তেমনি বড়ো সম্পদ পেয়ে গেছেন। তঁর জীবনের এই মহতুকে শ্রদ্ধা করতে পারলেই তার প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা প্ৰকাশ করা হবে। আশ্রমে যে সত্য কালে কালে ক্ৰমে ক্ৰমে পূৰ্ণ প্রকাশের মধ্যে উদঘাটিত হয়ে উঠেছে, পিয়ার্সন সাহেব তাকে জীবনে স্বীকার করে নিয়ে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার সাক্ষা রেখে গেছেন। শাস্তিনিকেতন পত্রিকা ফাল্গুন ১৩৩০ • মনোমোহন ঘোষ আমি দুর্বলতা ও ক্লাস্তিতে আক্রান্ত। একদিকে জরা ও অপরদিকে যৌবন-সুলভ কর্ম, এ দুইয়ে মিলে আমাকে ক্লাস্ত করে ফেলেছে। এ সভার উদ্যোক্তারা যখন আমাকে সভাপতি করবার প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন আমি তাতে দ্বিধা বোধ করেছিলাম। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ কারণে আজ আমি এখানে এসেছি। প্রথমত, কবি মনোমোহন ঘোষের মাতামহকে আমি আমার পরম আত্মীয় বলে জানতুম। শৈশবকালে তার কাছ থেকেই প্রথম আমি ইংরেজি সাহিত্যের ব্যাখ্যান শুনেছিলাম। ইংরেজ কবিদের মধ্যে কে কোন শ্রেণীতে আসন পান, তাহা তিনিই আমাকে প্রথম বুঝিয়েছিলেন। যদিও আমাদের বয়সের যথেষ্ট অনৈক্য ছিল তথাপি তার পর অনেকদিন পর্যন্ত দুজনের মধ্যে একটা সম্বন্ধ ছিল। এক-এক সময়ে তীর আশ্চর্য যৌবনের তেজ দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। মনোমোহন, অরবিন্দ ও ভাইদের সকলকে নিয়ে তাদের মা যখন ইংলন্ডে পৌঁছলেন, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলুম। শিশুবয়সেই তাদের আমি দেখেছি। ইংলন্ডে দুঃসহ দারিদ্র্যের সঙ্গে ংগ্রাম করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বলাভ করেছেন। সে কথা আপনারা সবাই জানেন। মনোমোহন যখন দেশে ফিরে এলেন তখন তীর সঙ্গে আমার পুনরায় পরিচয় হয়- সে পরিচয় আমার কাব্যসূত্রে। সেইদিন সেইক্ষণ আমার মনে পড়ে। জোড়াসাঁকোয় আমাদের বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় ‘সোনার তরী" পড়ছিলুম। মনোমোহন তখন সেই কাব্যের ছন্দ ও ভাব নিয়ে অতি সুন্দর