পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| b२ রবীন্দ্র-রচনাবলী সকলেই বলেছেন, এ কবি আমাদেরও কবি। যে-সমস্ত ঐশ্বর্য দ্বারা বিশ্ব ধনী হয়, সে সমস্ত ঐশ্বৰ্যদ্বারাই সমকক্ষতার যোগ স্থাপিত হয়। সাহিত্য মানে সমকক্ষতার যোগ। এই কবি মনােমোহন নিগৃঢ় নিকেতন থেকে যা বের করেছেন তা আজও ঢাকা রয়েছে। এ যখন প্রকাশ পাবে তখন বাংলাদেশের একটি মহিমা সর্বত্র প্রকাশিত হবে। আমরা যদিও একটু বঞ্চিত হয়েছি, কিন্তু তাতে র্তর দোষ নেই। আর কবি তো কেবল ইংরেজও নয়, কেবল বাঙালিও নয়- কবি সকল দেশেরই কবি। এই কবির কাব্য প্রকাশ হলে পর সকলেই আনন্দের সঙ্গে তাকে অভ্যর্থনা পরিচয় ছিল; তিনি প্রায়ই তীর কাব্য আমাকে শুনাতেন। আমি শুনে মুগ্ধ হতেম। তার প্রত্যেক শব্দচয়নের মধ্যে একটা বিশেষ সৌন্দর্য ছিল— আশ্চর্য নৈপুণ্যের সহিত তিনি তীর কাব্যের রূপ দিয়েছিলেন। আমার আশা আছে। এ-সকল কাব্য হতে সকল দেশের লোক আনন্দ পাবেকেবল 'গীেড়াজন' নহে-- সমস্ত বিশ্বজন তাহে আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি । প্রেসিডেন্সি কলেজ ম্যাগাজিন भ6 & s२8 • সরোজনলিনী দত্ত অর্থভাণ্ডারে মূল্যবান সামগ্ৰী লইয়া মানুষ গর্ব করে। কিন্তু তাহার চেয়ে বড়ো কথা স্মৃতিভাণ্ডারের সম্পদ। সেই মানুষই একান্ত দরিদ্র যাহার স্মৃতিসঞ্চায়ের মধ্যে অক্ষয় গীেরবের ধন বেশি কিছু নাই। তাই সরোজনলিনীর জীবনী পড়িয়া বুঝিলাম জীবনীলেখক তঁহার স্বামী শ্ৰীযুক্ত গুরুসদয় দত্ত যথার্থই ভাগ্যবান। কারণ এরূপ স্ত্রীকে মৃত্যুর মধ্যে হারাইয়াও হারানাে সম্ভব নহে; শুভদৃষ্টিক্রমে যিনি তাহাকে নিকটে পাইয়াছেন তাহার জীবনের মধ্যেই তিনি চিরদিন জীবিত থাকিবেন। বইখানি পড়িয়া আমার মনে এই খেদ হইল যে, তাহার সঙ্গে একবার ক্ষণকালের জন্য আমার দেখা হইয়াছিল, তাহার সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ আমার ঘটে নাই। সাধারণত আমরা যখন খাঁটি বাঙালির মেয়ের আদর্শ খুজি তখন গৃহকোণাচারিণীর পরেই আমাদের দৃষ্টি পড়ে। গৃহসীমানার মধ্যে আবদ্ধ যে সংকুচিত জীবন তাহারই সংকীর্ণ আদর্শের বহুবেষ্টনরক্ষিত উৎকর্ষ দুর্লভ পদার্থনহে। তাহার উপাদান অথবা, তাহার ক্ষেত্র অপ্রশস্ত, তাহার পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত অকঠোর। সরোজনলিনী বাহির সংসারের ভিড়ের মধ্যেই অধিকাংশ জীবন কাটাইয়াছেন, অনেক সময় কর্মজীবনের পরিধি আত্মীয়স্বজন বন্ধুমণ্ডলীর মধ্যেই অবরুদ্ধ ছিল না; তাহার সংসার আত্মীয় অনান্তীয়, স্বদেশী বিদেশী, পরিচিত অপরিচিত অনেক লোককে লইয়া। এই তীর বড়ো সংসারের মধ্যে সকলের সঙ্গে সম্বন্ধকে তিনি মাধুর্যের দ্বারা শোভন ও ত্যাগের দ্বারা কল্যাণময় করিয়াছিলেন। এইরূপ ক্ষেত্রেই নারী জীবনের যথার্থ পরিচয় ও পরীক্ষা। তাহার কাছে বাহিরের দ্বারা ঘর ও ঘরের দ্বারা বাহির পরাহত হয় নাই। এই উভয়ের সুন্দর সমন্বয়েই তাহার মহিমা প্রকাশিত হইয়াছে। আজকািলকার দিনে নারী একান্তভাবেই গৃহিণী তিনি আমাদের আদর্শনহেন, ঘরে বাহিরে সর্বত্রই যিনি কল্যাণী তিনিই আদর্শ র্যাহার জীবন কেবলমাত্র চিরাগত প্ৰাদেশিক প্রথা ও সংস্কারের ছাঁচে ঢালা তিনি আদর্শনহেন। কিন্তু যাহার মধ্যে বৃহৎ বিশ্বের জ্ঞান ও ভাবের বিচিত্র ধারা গভীর ও সুন্দরভাবে সংগতি লাভ করিতে বাধা না পায় তিনিই আদর্শ। সরোজনলিনীর জীবনী পড়িয়া আমরা এই আদর্শের পরিচয় পাইলাম। Rio TER OOR