পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8रै রবীন্দ্র-রচনাবলী নাইটিএইট পয়েণ্ট ফোর, ডাক্তাররা তাকে বলে নর্মাল, তাতে একেবারে কোনো বিপদ নেই । কিন্তু প্রেমজর যখন ১০৫ ছাড়িয়ে গেছে তখন রুগি আদর করে বলতে শুরু করেছে ‘পোড়ারমুখি, তখন চন্দ্ৰবদনীটা একেবারে সাফ ছেড়ে দিয়েছে। যারা প্রবীণ ডাক্তার তারা বলে এইটেই হল মরণের লক্ষণ। বড়োবউ, নিশ্চয় জেনো, বন্ধুমহলে আমিও যখন প্রলাপ বকি, তোমাকে যা না বলবার তাই বলি, তখন সেটা প্রণয়ের ডিলিরিয়ম, তখন বাধা আদরের ভাষায় একেবারে কুলোয় না ; গাল দিতে না পারলে ভালোবাসার ইষ্টিমের চাপে বুক ফেটে যায়, বিত্র রকমের অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। নাড়ী রসস্থ হলে তাতে ভাষা যে কিরকম এলোমেলো হয়ে ওঠে, তা সেই ডাক্তারই বোঝে রসবোধের যে একেবারে এম. ডি. । ক্ষান্তমণি। রক্ষে করে, আমার অত ডাক্তারি জানা নেই। চন্দ্রকাস্ত। সে তো ব্যবহারেই বুঝতে পারি নইলে লয়ালটিকে সিডিশন বলে সন্দেহ করবে কেন । কিন্তু নিশ্চয় রুগির দশা তোমাকেও মাঝে মাঝে ধরে । আচ্ছা, কলতলায় দাড়িয়ে তুমি কখনো পদ্মঠাকুরবিকে বলে নি— আমার এমনি কপাল ষে বিয়ে করে ইস্তিক মুখ কাকে বলে একদিনের তরে জানলুম না ? আমার কানে যদি সে কথা আসত তা হলে আনন্দে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত। ক্ষান্তমণি। আমি পদ্মঠাকুরবিকে কখ খনে অমন কথা বলি নি । চন্দ্রকাস্ত। আচ্ছা, তা হলে সাফ চাদরটা এনে দাও । ক্ষাস্তমণি । (চাদর আনিয়া দিয়া ) তুমি বাইরে বেরোচ্ছ যদি, চুলগুলো কাগের বাসার মতো করে বেরিয়ে না। একটু বোসো, তোমার চুল ঠিক করে দিই। [ চিরুনি ব্রুস লইয়া আঁচড়াইতে প্রবৃত্ত চন্দ্রকান্ত । হয়েছে, হয়েছে । ক্ষান্তমণি। না হয় নি, একদও মাথা স্থির করে রাখো দেখি । চন্দ্রকান্ত। তোমার সামনে আমার মাথার ঠিক থাকে না, দেখতে দেখতে ঘুরে যায়— ক্ষান্তমণি । অত ঠাট্টায় কাজ কী ! নাহয় আমার রূপ নেই, গুণ নেই— একটা ললিতলবঙ্গলত খোজ করে আনে। গে, আমি চললুম। [ চিরুনি ব্রুস ফেলিয়া দ্রুত প্রস্থান চন্দ্রকাস্ত । এখন আর সময় নেই, ফিরে এসে রাগ ভাঙাতে হবে। বিনোদ (নেপথ্য হইতে)। ওহে, আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে ? তোমাদের প্রেমাভিনয় সাঙ্গ হল কি ? চন্দ্রকান্ত। এইমাত্র যবনিকাপতন হয়ে গেল। হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি। ( প্রস্থান