পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা , , >QQ চন্দ্রকাস্ত । ওঁর আবার স্বামী কোথায় ? গদাই। মরেছে বুঝি ? আপদ গেছে। কিন্তু বিধবার মতো বেশ তো— চন্দ্রকাস্ত । .বিধবা নয় হে— কুমারী। যদি হঠাৎ স্বায়ুর ব্যামো ঘটে থাকে তো বলো, ঘটকালি করি। গদাই । তেমন স্বায়ু হলে এতদিনে গলায় দড়ি দিয়ে মরতুম। চন্দ্রকান্ত । তা হলে চলো, একবার বিনোদকে দেখে আসা যাক। তার বিশ্বাস, সে ভারি একটা অসমসাহসিক কাজ করতে প্রবৃত্ত হয়েছে, তাই একেবারে সপ্তমে চড়ে রয়েছে— যেন তার পূর্বে বঙ্গদেশে বাপ-পিতামহর আমল থেকে বিবাহ কেউ করে নি! গদাই । মেয়েমানুষকে বিয়ে করতে হবে, তার আবার ভয় কিসের ? চন্দ্রকান্ত । বলো কী গদাই ? বিধাতার আশীর্বাদে জন্মালুম পুরুষ হয়ে, কী জানি কার শাপে বিয়ে করতে গেলুম মেয়েমানুষকে, এ কি কম সাহসের কথা ? গদাই, যেয়ে না হে ! তোমাকে দরকার আছে, এখনি আসছি। [ প্রস্থান গদাই । ( পকেট হইতে নোটবুক ও পেন্সিল বাহির করিয়া) আর তো পারছি নে । মাথার ভিতরটা যেরকম ঘুলিয়ে গেছে, আজ বোধ হয় একটা দুষ্কৰ্ম করব। কবিতা লিখে ফেলব। বুদ্ধি পরিষ্কার থাকলে কবিতার ব্যাক্টরিয়া জন্মাতেই পারে না। চিত্তের অবস্থাটা খুব অস্বাস্থ্যকর হওয়া চাই। আজ আমার মগজের ভিতরে ঐ কীটাণুগুলি কেবলই চোদ্দ অক্ষর খুজে কিলবিল করে বেড়াচ্ছে । [ লিখিতে প্রবৃত্ত কাদম্বিনী যেমনি আমায় প্রথম দেখিলে, কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে । ভাবটা নতুন রকমের হয়েছে, কিন্তু হতভাগা ছন্দটাকে বাগাতে পারছি নে। (গণনা করিয়া ) প্রথম লাইনটা হয়েছে ষোলো, দ্বিতীয়টা হয়েছে পনেরো । কিন্তু কাকে ফেলে কাকে রাখি। ( চিন্তা ) ‘আমায়'-কে ‘আমা’ বললে কেমন শোনায় ? কাদম্বিনী যেমনি আমা প্রথম দেখিলে— কানে তো নেহাত খারাপ ঠেকছে না। তবুও একটা অক্ষর বেশি থাকে। কাদম্বিনীর নীটা কেটে যদি সংক্ষেপ করে দেওয়া যায় ? পুরো নামের চেয়ে সে তো আরো আদরের শুনতে হবে। কাদম্বি— না, ঠিক শোনাচ্ছে না। কদম্ব— ঠিক হয়েছে— কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে, কেমন করে ভূত্য বলে তখনি চিনিলে । উ হু, ও হচ্ছে না। 'কেমন করে কথাটাকে তো কমাবার জো নেই। “কেমন করিয়া’— তাতে আরো একটা অক্ষর বেড়ে যায়। তখনি চিনিলে’র জায়গায় > * > X