গল্পগুচ্ছ অনধিকার প্রবেশ একদা প্রাতঃকালে পথের ধারে দাড়াইয়া এক বালক আর-এক বালকের সহিত একটি অসমসাহসিক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে বাজি রাখিয়াছিল । ঠাকুরবাড়ির মাধবীবিতান হইতে ফুল তুলিয়া আনিতে পারিবে কি না, ইহাই লইয়া তর্ক। একটি বালক বলিল ‘পারিব’, আর-একটি বালক বলিল ‘কথনোই পারিবে না । কাজটি শুনিতে সহজ অথচ করিতে কেন সহজ নহে তাহার বৃত্তাস্ত আর-একটু বিস্তারিত করিয়া বলা আবশ্যক । পরলোকগত মাধবচন্দ্র তর্কবাচস্পতির বিধবা স্ত্রী জয়কালী দেবী এই রাধানাথ জীউর মন্দিরের অধিকারিণী । অধ্যাপক মহাশয় টোলে যে তর্কবাচস্পতি উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন পত্নীর নিকটে একদিনের জন্য ও সে উপাধি সপ্রমাণ করিতে পারেন নাই । কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে উপাধির সার্থকতা ঘটিয়াছিল, কারণ, তর্ক এবং বাক্য সমস্তই তাহার পত্নীর অংশে পড়িয়াছিল, তিনি পতিরূপে তাহার সম্পূর্ণ ফলভোগ করিয়াছিলেন । সত্যের অনুরোধে বলিতে হইবে জয়কালী অধিক কথা কহিতেন না কিন্তু অনেক সময় দুটি কথায়, এমন-কি, নীরবে অতি বড়ো প্রবল মুখবেগও বন্ধ করিয়া দিতে পারিতেন । জয়কালী দীর্ঘাকার দৃঢ়শরীর তীক্ষনাসা প্রখরবুদ্ধি স্ত্রীলোক। র্তাহার স্বামী বর্তমানে তাহদের দেবোত্তর সম্পত্তি নষ্ট হইবার জো হইয়াছিল । বিধবা তাহার সমস্ত বাকি বকেয়া আদায়, সীমাসরহদ স্থির এবং বহুকালের বেদখল উদ্ধার করিয়া সমস্ত পরিষ্কার করিয়াছিলেন । র্তাহার প্রাপ্য হইতে কেহ তাহাকে এক কড়ি বঞ্চিত করিতে পারিত না । --- এই স্ত্রীলোকটির প্রকৃতির মধ্যে বহুল পরিমাণে পৌরুষের অংশ থাকাতে র্তাহার যথার্থ সঙ্গী কেহ ছিল না। স্ত্রীলোকেরা তাহাকে ভয় করিত। পরনিন্দা, ছোটো কথা বা নাকি কাল্প তাহার অসহ ছিল। পুরুষেরাও র্তাহাকে ভয় করিত ; কারণ, পল্লীবাসী
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।