পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ S)వి অত্যন্ত খাতির করিয়া কহিলেন, “শশীবাবু, এ মকদ্দমাট গোপনে মিটমাট করিয়া ফেলিলে ভালো হয় না কি।” শশীবাবু টেবিলের উপরিস্থিত একখানি আইন গ্রন্থের মলাটের উপর তাহার কুঞ্চিতভ্র ক্ষীণ দৃষ্টি অত্যন্ত নিবিষ্টভাবে রক্ষা করিয়া কহিলেন, “আমার মক্কেলকে আমি এরূপ পরামর্শ দিতে পারি না । তিনি প্রকাশ্যভাবে অপমানিত হইয়াছেন, গোপনে ইহার মিটমাট হইবে কী করিয়া ।” সাহেব দুইচারি কথা কহিয়া বুঝিলেন, এই স্বল্পভাষী স্বল্পদৃষ্টি লোকটিকে সহজে বিচলিত করা সম্ভব নহে, কহিলেন, “অলরাইটু বাৰু, দেখা যাউক কতদূর কী হয়।” এই বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব মকদ্দমার দিন ফিরাইয়া দিয়া মফস্বলভ্রমণে বাহির হইলেন। এ দিকে জয়েণ্ট সাহেব জমিদারকে পত্র লিখিলেন, “তোমার নায়েব আমার ভৃত্যদিগকে অপমান করিয়া আমার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে, আশা করি, তুমি ইহার সমুচিত প্রতিকার করিবে ।” জমিদার শশব্যস্ত হইয়া তৎক্ষণাং হরকুমারকে তলব করিলেন। নায়েব আদ্যোপাস্ত সমস্ত ঘটনা খুলিয়া বলিলেন । জমিদার অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “সাহেবের মেথর যখন চারি সের ঘি চাহিল তুমি বিনা বাক্যব্যয়ে তৎক্ষণাৎ কেন দিলে না। তোমার কি বাপের কড়ি লাগিত ।” হরকুমার অস্বীকার করিতে পারিলেন না ষে, ইহাতে র্তাহার পৈতৃক সম্পত্তির কোনোরূপ ক্ষতি হইত না। নতশিরে অপরাধ স্বীকার করিয়া কহিলেন, “আমার গ্রহ মন্দ তাই এমন দুরবুদ্ধি ঘটিয়াছিল।” জমিদার কহিলেন, “তাহার পর আবার সাহেবের নামে নালিশ করিতে তোমাকে কে বলিল ।” হরকুমার কহিলেন, "ধর্মাবতার, নালিশ করিবার ইচ্ছা আমার ছিল না ; ওই আমাদের গ্রামের শশী, তাহার কোথাও কোনো মকদ্দমা জোটে না, সে ছোড়া নিতান্ত জোর করিয়া প্রায় আমার সম্মতি না লইয়াই এই হাঙ্গামা বাধাইয়া বসিয়াছে।” শুনিয়া জমিদার শশিভূষণের উপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। বুঝিলেন, লোকটা অপদাৰ্থ নব্য উকিল, কোনো ছুতায় একটা হুজুক তুলিয়া সাধারণের সমক্ষে পরিচিত হইবার চেষ্টায় আছে। নায়েবকে হুকুম করিয়া দিলেন, মকদ্দমা তুলিয়া লইয়া যেন অবিলম্বে ছোটো বড়ো ম্যাজিস্ট্রেট যুগলকে ঠাণ্ড করা হয়। নায়েব সাহেবের জন্য কিঞ্চিং ফলমূল শীতলভোগ উপহার লইয়া জয়েণ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের 〉?|〉d