পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२९० রবীন্দ্র-রচনাবলী বাসায় গিয়া হাজির হইলেন। সাহেবকে জানাইলেন, সাহেবের নামে মকদ্দমা করা তাহার আদৌ স্বভাববিরুদ্ধ; কেবল শশিভূষণ নামে গ্রামের একটি অজাতশ্মশ্র অপোগণ্ড অর্বাচীন উকিল তাহাকে একপ্রকার না জানাইয়াই এইরূপ স্পর্ধার কাজ করিয়াছে । সাহেব শশিভূষণের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত এবং নায়েবের প্রতি বড়ো সন্তুষ্ট হইলেন, এবং কহিলেন রাগের মাথায় নায়েববাবুকে ‘ডও বিচান’ করিয়া তিনি ‘ডুথি আছেন। সাহেব বাংলা ভাষার পরীক্ষায় সম্প্রতি পুরস্কার লাভ করিয়া সাধারণের সহিত সাধুভাষায় বাক্যালাপ করিয়া থাকেন । নায়েব কহিলেন, মা-বাপ কখনো-বা রাগ করিয়া শাস্তিও দিয়া থাকেন কখনো-বা আদর করিয়া কোলেও টানিয়া লন, ইহাতে সস্তানের বা মা-বাপের দুঃখের কোনো কারণ নাই । অতঃপর জয়েণ্ট সাহেবের সমস্ত ভৃত্যবর্গকে যথাযোগ্য পারিতোষিক দিয়া হরকুমার মফস্বলে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সহিত দেখা করিতে গেলেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাহার মুখে শশিভূষণের স্পর্ধার কথা শুনিয়া কহিলেন, “আমিও আশ্চর্য হইতেছিলাম যে, নায়েব বাবুকে বরাবর ভালো লোক বলিয়াই জানিতাম, তিনি যে সর্বাগ্রে আমাকে জানাইয়া গোপনে মিটমাট না করিয়া হঠাৎ মকদ্দমা আনিবেন, এ কী অসম্ভব ব্যাপার । এখন সমস্ত বুঝিতে পারিতেছি।” অবশেষে নায়েবকে জিজ্ঞাসা করিলেন, শশী কনগ্রেসে যোগ দিয়াছে কি না। নায়েব অম্লানমুখে বলিলেন, হা । সাহেব তাহার সাহেবি বুদ্ধিতে স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন, এ সমস্তই কনগ্রেসের চাল । একটা পাকচক্র বাধাইয়া অমৃতবাজারে প্রবন্ধ লিখিয়া গবর্মেন্টের সহিত খিটমিট করিবার জন্য কনগ্রেসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেলাগণ লুকায়িতভাবে চতুর্দিকে অবসর অনুসন্ধান করিতেছে। এই-সকল ক্ষুদ্র কণ্টকগণকে একদমে দলন করিয়া ফেলিবার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তে অধিকতর সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই বলিয়া সাহেব ভারতবর্ষীয় গবর্মেন্টকে অত্যন্ত দুর্বল গবর্মেন্ট বলিয়া মনে মনে ধিক্কার দিলেন । কিন্তু কনগ্রেসওয়াল শশিভূষণের নাম ম্যাজিস্ট্রেটের মনে রহিল। श्रेष श्रद्वेिटघ्छ्ल সংসারে বড়ে বড়ো ব্যাপারগুলি যখন প্রবলভাবে গজাইয়া উঠিতে থাকে তখন ছোটো ছোটাে ব্যাপারগুলিও ক্ষুধিত ক্ষুদ্র শিকড়জাল লইয়া জগতের উপর আপন দাবি বিস্তার করিতে ছাড়ে না।