পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্ত্রী একবার আমার মুখের দিকে চাহিলেন ; আমি তাহার মুখের দিকে চাহিতে পারিলাম না। পরক্ষণেই তিনি ক্ষীণস্বরে অভ্যাগতকে বলিলেন, “আপনি আমুন।” আমাকে বলিলেন, “আলোটা ধরে ।” মনোরম ঘরে আসিয়া বসিলেন । তাহার সহিত রোগিণীর অল্পস্বল্প আলাপ চলিতে লাগিল। এমন সময় ডাক্তারবাবু আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি তাহার ডাক্তারখানা হইতে দুই শিশি ওষুধ সঙ্গে আনিয়াছিলেন। সেই দুটি শিশি বাহির করিয়া আমার স্ত্রীকে বলিলেন, “এই নীল শিশিটা মালিশ করিবার, আর এইটি খাইবার। দেখিবেন, দুইটাতে মিলাইবেন না, এ ওষুধটা ভারি বিষ।” আমাকেও একবার সতর্ক করিয়া দিয়া ঔষধ দুটি শষ্যাপার্শ্ববর্তী টেবিলে রাখিয়া দিলেন। বিদায় লইবার সময় ডাক্তার তাহার কন্যাকে ডাকিলেন । মনোরমা কহিলেন, “বাবা, আমি থাকি না কেন । সঙ্গে স্ত্রীলোক কেহ নাই, ইহাকে সেবা করিবে কে ?” আমার স্ত্রী ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন ; বলিলেন, “না, না, আপনি কষ্ট করিবেন না। পুরানো ঝি আছে, সে আমাকে মায়ের মতো যত্ন করে।” ডাক্তার হাসিয়া বলিলেন, “উনি মা-লক্ষ্মী, চিরকাল পরের সেবা করিয়া আসিয়াছেন, অন্তের সেবা সহিতে পারেন না।” কন্যাকে লইয়া ডাক্তার গমনের উদযোগ করিতেছেন এমন সময় আমার স্ত্রী বলিলেন, “ডাক্তারবাবু, ইনি এই বদ্ধঘরে অনেকক্ষণ বসিয়া আছেন, ইহাকে একবার বাহিরে বেড়াইয়া লইয়া আসিতে পারেন ?” ডাক্তারবাবু আমাকে কহিলেন, “আম্বন-না, আপনাকে নদীর ধার হইয়া একবার বেড়াইয়া আনি ।” আমি ঈষৎ আপত্তি দেখাইয়া অনতিবিলম্বে সম্মত হইলাম। ডাক্তারবাৰু যাইবার সময় দুই শিশি ঔষধ সম্বন্ধে আবার আমার স্ত্রীকে সতর্ক করিয়া দিলেন। সেদিন ডাক্তারের বাড়িতেই আহার করিলাম। ফিরিয়া আসিতে রাত হইল । আসিয়া দেখি আমার স্ত্রী ছট্‌ফট্‌ করিতেছেন। অনুতাপে বিদ্ধ হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “তোমার কি ব্যথা বাড়িয়াছে।” তিনি উত্তর করিতে পারিলেন না, নীরবে আমার মুখের দিকে চাহিলেন। তখন র্তাহার কণ্ঠরোধ হইয়াছে। আমি তৎক্ষণাৎ সেই রাত্রেই ডাক্তারকে ডাকাইয়া আনিলাম। ডাক্তার প্রথমটা আসিয়া অনেকক্ষণ কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। অবশেষে