পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ՀԵ-Ֆ শশীর বক্ষে শেলের মতো বাজিত ; তাই সে দণ্ডিত ভ্রাতাকে স্বরে লইয়া গিয়া তাহাকে মিষ্ট দিয়া, খেলেন দিয়া, আদর করিয়া, চুমো খাইয়া শিশুর আহত হৃদয়ে যথাসাধ্য সাত্বনা-বিধান করিবার চেষ্টা করিত। ফলত দেখা গেল, শশী নীলমণিকে যতই ভালোবাসে জয়গোপাল নীলমণির প্রতি ততই বিরক্ত হয়, আবার জয়গোপাল নীলমণির প্রতি যতই বিরাগ প্রকাশ করে শশী তাহাকে ততই স্নেহমুধায় অভিষিক্ত করিয়া দিতে থাকে। জয়গোপাল লোকটা কখনো তাহার স্ত্রীর প্রতি কোনোরূপ কঠোর ব্যবহার করে না এবং শশী নীরবে নম্রভাবে প্রীতির সহিত তাহার স্বামীর সেবা করিয়া থাকে ; কেবল এই নীলমণিকে লইয়া ভিতরে ভিতরে উভয়ে উভয়কে অহরহ আঘাত দিতে লাগিল । এইরূপ নীরব দ্বন্দ্বের গোপন আঘাতপ্রতিঘাত প্রকাগু বিবাদের অপেক্ষা ঢের বেশি দুঃসহ। তৃতীয় পরিচ্ছেদ নীলমণির সমস্ত শরীরের মধ্যে মাথাটাই সর্বপ্রধান ছিল । দেখিলে মনে হইত, বিধাতা যেন একটা সরু কাঠির মধ্যে ফু দিয়া তাহার ডগার উপরে একটা বড়ো বুদবুদ ফুটাইয়া তুলিয়াছেন। ডাক্তাররাও মাঝে মাঝে আশঙ্কা প্রকাশ করিত, ছেলেটি এইরূপ বুদবুদের মতোই ক্ষণভঙ্গুর ক্ষণস্থায়ী হইবে। অনেকদিন পর্যস্ত সে কথা কহিতে এবং চলিতে শেখে নাই। তাহার বিষন্ন গম্ভীর মুখ দেখিয়া বোধ হইত, তাহার পিতামাতা র্তাহাদের অধিক বয়সের সমস্ত চিন্তাভার এই ক্ষুদ্র শিশুর মাথার উপরে চাপাইয়া দিয়া গেছেন । দিদির যত্নে ও সেবায় নীলমণি তাহার বিপদের কাল উত্তীর্ণ হইয়া ছয় বৎসরে * ग्निल । কাতিক মাসে ভাইফোটার দিনে নূতন জামা চাদর এবং একখানি লালপেড়ে ধুতি পরাইয়া বাৰু সাজাইয়া নীলমণিকে শশী ভাইফোটা দিতেছেন এমন সময়ে পূর্বোক্ত স্পষ্টভাষিণী প্রতিবেশিনী তারা আসিয়া কথায় কথায় শশীর সহিত ঝগড়া বাধাইয়া দিল। সে কহিল, গোপনে ভাইয়ের সর্বনাশ করিয়া ঘটা করিয়া ভাইয়ের কপালে ফোট দিবার কোনো ফল নাই । শুনিয়া শশী বিস্ময়ে ক্রোধে বেদনায় বজাহত হইল। অবশেষে শুনিতে পাইল, তাহারা স্বামীজীতে পরামর্শ করিয়া নাবালক নীলমণির সম্পত্তি খাজনার দায়ে নিলাম করাইয়া তাহার স্বামীর পিসতুতো ভাইয়ের নামে বেনামি করিয়া কিনিতেছে। 》本制》ö