পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপানযাত্রী "ఏమా তত্ত্বটাই প্রধান। সাহিত্যে সেই ব্যক্তিটাই প্রধান, তত্ত্বটা উপলক্ষ । এই ষে সাদা মেঘের ছিটে-দেওয়া নীল আকাশের নীচে শুমল-ঐশ্বর্যময়ী ধরণীর আঙিনার সামনে দিয়ে সন্ন্যাসী জলের স্রোত উদাসী হয়ে চলেছে, তার মাঝখানে প্রধানত প্রকাশ পাচ্ছে দ্রষ্টা আমি । যদি ভূতত্ব বা ভূৰ্বত্তান্ত প্রকাশ করতে হত তা হলে এই আমিকে সরে দাড়াতে হত। কিন্তু, এক আমির পক্ষে আর-এক আমির অহেতুক প্রয়োজন আছে, এইজন্ত সময় পেলেই আমরা ভূতত্ত্বকে সরিয়ে রেখে সেই আমির সন্ধান করি । তেমনি করেই কেবলমাত্র দৃশ্বের মধ্যে নয়, ভাবের মধ্যেও যে ভেসে চলেছে সেও সেই দ্রষ্টা আমি । সেখানে যা বলছে সেটা উপলক্ষ, যে বলছে সেই লক্ষ্য । বাহিরের বিশ্বের রূপধারার দিকে ও আমি যেমন তাকাতে তাকাতে চলেছি, আমার অস্তরের চিন্তাধারা ভাবধারার দিকেও আমি তেমনি চিত্তদৃষ্টি দিয়ে তাকাতে তাকাতে চলেছি। এই ধারা কোনো বিশেষ কর্মের বিশেষ প্রয়োজনের স্থত্রে বিধৃত নয়। এই ধারা প্রধানত লজিকের দ্বারাও গাথা নয়, এর গ্রন্থনস্থত্র মুখ্যত আমি । সেইজন্তে আমি কেয়ারমাত্র করি নে, সাহিত্য সম্বন্ধে বক্ষ্যমাণ রচনাটিকে লোক পাকা কথা বলে গ্রহণ করবে কি না। বিশ্বলোকে এবং চিত্তলোকে ‘আমি দেখছি’ এই অনাবশ্যক আনন্দের কথাটা বলাই হচ্ছে আমার কাজ। এই কথাটা যদি ঠিক করে বলতে পারি তা হলে অন্ত সকল আমির দলও বিনা প্রয়োজনে খুশি হয়ে উঠবে। উপনিষদে লিখছে, এক-ডালে দুই পাখি আছে, তার মধ্যে এক পাখি খায় আর-এক পাখি দেখে । যে-পাখি দেখছে তারই আনন্দ বড়ো আনন্দ ; কেননা, তার সে বিশুদ্ধ আনন্দ, মুক্ত আনন্দ । মানুষের নিজের মধ্যেই এই দুই পাখি আছে। এক পাখির প্রয়োজন আছে, আর-এক পাখির প্রয়োজন নেই। এক পাখি ভোগ করে, আর-এক পাখি দেখে । যে-পাখি ভোগ করে সে নির্মাণ করে, যে-পাখি দেখে সে স্থষ্টি করে । নির্মাণ করা মানে মাপে তৈরি করা, অর্থাৎ যেটা তৈরি হচ্ছে সেইটেই চরম নয়, সেইটেকে অন্য কিছুর মাপে তৈরি করা— নিজের প্রয়োজনের মাপে বা অন্তের প্রয়োজনের মাপে । আর, স্বষ্টি করা অন্য কোনো-কিছুর মাপের অপেক্ষা করে না, সে হচ্ছে নিজেকে সর্জন করা, নিজেকেই প্রকাশ করা । এইজন্ত ভোগী পাখি ষে সমস্ত উপকরণ নিয়ে কাজ করছে তা প্রধানত বাইরের উপকরণ, আর দ্রষ্ট পাখির উপকরণ হচ্ছে আমি-পদার্থ। এই আমির প্রকাশই সাহিত্য, আর্ট । তার মধ্যে কোনো দায়ই নেই, কর্তব্যের দায়ও না । পৃথিবীতে সব-চেয়ে বড়ো রহস্ত— দেখবার বস্তুটি নয়, যে দেখে সেই মাচুষটি। এই রহস্ত আপনি আপনার ইয়ত্ত পাচ্ছে না ; হাজার হাজার অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে డిసె|Re