পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Ф o o রবীন্দ্র-রচনাবলী আপনাকে দেখতে চেষ্টা করছে। যা-কিছু ঘটছে এবং যা-কিছু ঘটতে পারে, সমস্তর ভিতর দিয়ে নিজেকে বাজিয়ে দেখছে। এই ষে আমার এক আমি, এ বহুর মধ্যে দিয়ে চলে চলে নিজেকে নিত্য উপলব্ধি করতে থাকে। বহুর সঙ্গে মানুষের সেই একের মিলনজাত রসের উপলব্ধিই হচ্ছে সাহিত্যের সামগ্ৰী। অর্থাৎ, দৃষ্ট বস্তু নয়, স্রষ্টা আমিই তার লক্ষ্য। তোসামারু জাহাজ ২০ বৈশাখ ১৩২৩ \O বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রের মোহানায় পাইলট নেবে গেল। এর কিছু আগে থাকতেই সমুদ্রের রূপ দেখা দিয়েছে। তার কূলের বেড়ি খসে গেছে। কিন্তু, এখনো তার মাটির রঙ ঘোচে নি। পৃথিবীর চেয়ে আকাশের সঙ্গেই যে তার আত্মীয়তা বেশি, সে-কথা এখনো প্রকাশ হয় নি ; কেবল দেখা গেল জলে আকাশে এক-দিগন্তের মালা বদল করেছে। যে ঢেউ দিয়েছে নদীর ঢেউয়ের ছন্দের মতো তার ছোটো ছোটো পদবিভাগ নয় ; এ যেন মন্দাক্রাস্তা, কিন্তু এখনো সমুদ্রের শার্দ লবিক্রীড়িত শুরু হয় নি। আমাদের জাহাজের নীচের তলার ডেকে অনেকগুলি ডেকু-প্যাসেঞ্জার ; তাদের অধিকাংশ মাদ্রাজি, এবং তারা প্রায় সকলেই রেজুনে যাচ্ছে। তাদের পরে এই জাহাজের লোকের ব্যবহারে কিছুমাত্র কঠোরতা নেই, তারা বেশ স্বচ্ছন্দে আছে। জাহাজের ভাণ্ডার থেকে তারা প্রত্যেকে একখানি করে ছবি আঁকা কাগজের পাখা পেয়ে ভারি খুশি হয়েছে। এরা অনেকেই হিন্দু, সুতরাং এদের পথের কষ্ট ঘোচানো কারো সাধ্য নয়। কোনোমতে আখ চিবিয়ে, চি ড়ে খেয়ে এদের দিন যাচ্ছে। একটা জিনিস ভারি চোখে লাগে, সে হচ্ছে এই যে, এরা মোটের উপর পরিষ্কার— কিন্তু সেটা কেবল বিধানের গণ্ডির মধ্যে, বিধানের বাইরে এদের নোংরা হবার কোনো বাধা নেই। আখ চিবিয়ে তার ছিবড়ে অতি সহজেই সমুদ্রে ফেলে দেওয়া যায়, কিন্তু সেটুকু কষ্ট নেওয়া এদের বিধানে নেই– যেখানে বলে থাচ্ছে তার নেহাত কাছে ছিবড়ে ফেলছে, এমনি করে চারি দিকে কত আবর্জন যে জমে উঠছে তাতে এদের ক্ৰক্ষেপ নেই ; সব-চেয়ে আমাকে পীড়া দেয় যখন দেখি থুথু ফেলা সম্বন্ধে এরা বিচার করে না। অথচ, বিধান অনুসারে শুচিত রক্ষা করবার বেলায় নিতান্ত সামান্ত বিষয়েও এরা অসামান্ত রকম কষ্ট স্বীকার করে।