পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপানযাত্রী \లిe :) এসে প্রবেশ করলুম। থাকে থাকে প্রশস্ত সিড়ি উঠে চলেছে ; তার উপরে আচ্ছাদন। এই সিড়ির দুই ধারে ফল ফুল বাতি, পূজার অর্ঘ্য বিক্রি চলছে। যারা বেচছে তারা অধিকাংশই ব্ৰহ্মীয় মেয়ে। ফুলের রঙের সঙ্গে তাদের রেশমের কাপড়ের রঙের মিল হয়ে মন্দিরের ছায়াটি স্বর্যাস্তের আকাশের মতে বিচিত্র হয়ে উঠেছে। কেনাবেচার কোনো নিষেধ নেই, মুসলমান দোকানদারের বিলাতি মনিহারির দোকান খুলে বসে গেছে। মাছমাংসেরও বিচার নেই, চারি দিকে খাওয়াদাওয়া ঘরকন্ন চলছে। সংসারের সঙ্গে মন্দিরের সঙ্গে ভেদমাত্র নেই, একেবারে মাখামাথি । কেবল, হাটবাজারে যেরকম গোলমাল, এখানে তা দেখা গেল না। চারি দিক নিরালা নয়, অথচ নিতৃত ; স্তন্ধ নয়, শাস্ত । আমাদের সঙ্গে ব্ৰহ্মদেশীয় একজন ব্যারিস্টার ছিলেন, এই মন্দিরসোপানে মাছমাংস কেনাবেচা এবং খাওয়া চলছে, এর কারণ র্তাকে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন, “বুদ্ধ আমাদের উপদেশ দিয়েছেন, তিনি বলে দিয়েছেন– কিসে মানুষের কল্যাণ, কিসে তার বন্ধন , তিনি তো জোর করে কারো ভালো করতে চান নি; বাহিরের শাসনে কল্যাণ নেই, অস্তরের ইচ্ছাতেই মুক্তি ; এইজন্তে আমাদের সমাজে বা মন্দিরে আচার সম্বন্ধে জবরদস্তি নেই।” 峰 সিড়ি বেয়ে উপরে যেখানে গেলুম সেখানে খোলা জায়গা, তারই নানা স্থানে নানারকমের মন্দির। সে মন্দিরে গাম্ভীর্য নেই, কারুকার্যের ঠেসাঠেলি ভিড়, সমস্ত যেন ছেলেমানুষের খেলনার মতো। এমন অদ্ভূত পাচমিশালি ব্যাপার আর কোথাও দেখা যায় না— এ যেন ছেলে-ভূলোনো ছড়ার মতো ; তার ছন্দটা একটানা বটে, কিন্তু তার মধ্যে স্বা-খুশি-তাই এসে পড়েছে, ভাবের পরস্পর-সামঞ্জস্তের কোনো দরকার নেই। বহুকালের পুরাতন শিল্পের সঙ্গে এখনকার কালের নিতান্ত সস্তাদরের তুচ্ছতা একেবারে গায়ে গায়ে সংলগ্ন। ভাবের অসংগতি বলে যে কোনো পদার্থ আছে, এরা তা যেন একেবারে জানেই না। আমাদের কলকাতায় বড়োমামুষের ছেলের বিবাহযাত্রায় রাস্তা দিয়ে যেমন সকল রকমের অদ্ভূত অসামঞ্জস্তের বন্যা বয়ে যায়, কেবলমাত্র পুীকরণটাই তার লক্ষ্য, সঙ্গীকরণ নয়, এও সেইরকম। এক ঘরে অনেকগুলো ছেলে থাকলে যেমন তারা গোলমাল করে, সেই গোলমাল করাতেই তাদের আনন্দ – এই মন্দিরের সাজসজ্জা, প্রতিমা, নৈবেদ্য, সমস্ত যেন সেইরকম ছেলেমানুষের উৎসব ; তার মধ্যে অর্থ নেই, শব্দ আছে । মন্দিরের ওই সোনা-বাধানো পিতল-বাধানো চূড়াগুলি ব্ৰহ্মদেশের ছেলেমেয়েদের আনন্দের উচ্চহাস্তমিশ্ৰিত হে হে শৰা— আকাশে ঢেউ খেলিয়ে উঠছে। এদের ৰেন বিচার করবার, গভীর হবার বয়স হয় নি। এখানকার এই রঙিন মেয়েরাই সব-চেয়ে চোখে পড়ে। এদেশের শাখাপ্রশাখা ভরে এরা যেন