পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপানযাত্রী 躁 ●う〉 যেমন সহজ ছিল, এ তার চেয়ে বেশি শক্ত নয়। তখন মাস্টার ম্যাপে আঙুল বুলিয়ে দেশ দেখাতেন, এ হচ্ছে জাহাজ বুলিয়ে দেখানে । এরকম ভ্রমণের মধ্যে বস্তুতন্ত্রতা’ খুব সামান্ত । বসে বসে স্বপ্ন দেখবার মতো । না করছি চেষ্টা, না করছি চিস্তা, চোখের সামনে আপনা-আপনি সব জেগে উঠছে। এই-সব দেশ বের করতে, এর পথ ঠিক করে রাখতে, এর রাস্তাঘাট পাকা করে তুলতে, অনেক মানুষকে অনেক ভ্রমণ এবং অনেক দুঃসাহস করতে হয়েছে ; আমরা সেই সমস্ত ভ্রমণ ও দুঃসাহসের বোতলে-ভরা মোরব্বা উপভোগ করছি যেন। এতে কোনো কাটা নেই, খোসা নেই, অঁাটি নেই ; কেবল শাসটুকু আছে, আর তার সঙ্গে যতটা সম্ভব চিনি মেশানো ! অকূল সমূদ্র ফুলে ফুলে উঠছে, দিগন্তের পর দিগন্তের পর্দা উঠে উঠে যাচ্ছে, দুর্গমতার একটা প্রকাগু মূতি চোখে দেখতে পাচ্ছি ; অথচ আলিপুরে খাচার-সিংহটার মতো তাকে দেখে আমোদ বোধ করছি ; ভীষণও মনোহর হয়ে দেখা দিচ্ছে । আরব্য উপন্যাসে আলাদিনের প্রদীপের কথা যখন পড়েছিলুম তখন সেটাকে ভারি লোভনীয় মনে হয়েছিল। এ তো সেই প্রদীপেরই মায়া। জলের উপরে স্থলের উপরে সেই প্রদীপটা ঘষছে, আর অদৃশ্ব দৃপ্ত হচ্ছে, দূর নিকটে এসে পড়ছে। আমরা এক জায়গায় বসে আছি, আর জায়গাগুলোই আমাদের সামনে এসে পড়ছে। কিন্তু মানুষ ফলটাকেই যে মূখ্যভাবে চায় তা নয়, ফলিয়ে তোলানোটাই তার সবচেয়ে বড়ো জিনিস। সেইজন্তে, এই যে ভ্রমণ করছি এর মধ্যে মন একটা অভাব অনুভব করছে, সেটি হচ্ছে এই যে আমরা ভ্রমণ করছি নে। সমুদ্রপথে আসতে আসতে মাঝে মাঝে দূরে দূরে এক-একটা পাহাড় দেখা দিচ্ছিল, আগাগোড়া গাছে ঢাকা ; ঠিক যেন কোন দানবলোকের প্রকাণ্ড জন্তু তার কোকড়া সবুজ রোয়া নিয়ে সমুদ্রের ধারে ঝিমোতে ঝিমোতে রোদ পোয়াচ্ছে ; মুকুল তাই দেখে বললে, ওইখানে নেবে যেতে ইচ্ছা করে। ওই ইচ্ছাটা হচ্ছে সত্যকার ভ্রমণ করবার ইচ্ছা । অন্য কর্তৃক দেখিয়ে দেওয়ার বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে নিজে দেখার ইচ্ছ। ওই পাহাড়ওয়ালা ছোটো ছোটো দ্বীপগুলোর নাম জানি নে, ইস্কুলের ম্যাপে ওগুলোকে মুখস্ত করতে হয় নি ; দূর থেকে দেখে মনে হয়, ওরা একেবারে তাজা রয়েছে, সারকুলেটিং লাইব্রেরির বইগুলোর মতো মামুষের হাতে হাতে ফিরে নানা চিহ্নে চিহ্নিত হয়ে যায় নি ; সেইজন্যে মনকে টানে । অস্তের পরে মানুষের বড়ো ঈর্ষা । ষাকে আর কেউ পায় নি মানুষ তাকে পেতে চায়। তাতে ষে পাওয়ার পরিমাণ বাড়ে তা নয়, কিন্তু পাওয়ার অভিমান বাড়ে । স্বর্ধ যখন অস্ত যাচ্ছে তখন পিনাঙের বন্দরে জাহাজ এসে পৌছল। মনে হল,