পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ბვ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী একটি কথা তোমরা মনে রেখো— আমি যেমন যেমন দেখছি তেমনি তেমনি লিখে চলেছি। এ কেবল একটা নতুন দেশের উপর চোখ বুলিয়ে যাবার ইতিহাস মাত্র। এর মধ্যে থেকে তোমরা কেউ যদি অধিক পরিমাণে, এমন-কি, অল্প পরিমাণেও ‘বস্তুতন্ত্রতা’ দাবি কর তো নিরাশ হবে। আমার এই চিঠিগুলি জাপানের ভূবৃত্তান্তরূপে পাঠ্যসমিতি নির্বাচন করবেন না, নিশ্চয় জানি। জাপান সম্বন্ধে আমি যা কিছু মতামত প্রকাশ করে চলেছি তার মধ্যে জাপান কিছু পরিমাণে আছে, আমিও কিছু পরিমাণে আছি, এইটে তোমরা যদি মনে নিয়ে পড় তা হলেই ঠকবে না । ভুল বলব না, এমন আমার প্রতিজ্ঞ নয় ; যা মনে হচ্ছে বলব, এই আমার মতলব । ২২শে জ্যৈষ্ঠ ১৩২৩ কোবে S 8 যেমন যেমন দেখছি তেমনি তেমনি লিখে যাওয়া আর সম্ভব নয়। পূর্বেই লিখেছি, জাপানির বেশি ছবি দেয়ালে টাঙায় না, গৃহসজ্জায় ঘর ভরে ফেলে না । যা তাদের কাছে রমণীয় তা তারা অল্প করে দেখে ; দেখা সম্বন্ধে এরা যথার্থ ভোগী বলেই দেখা সম্বন্ধে এদের পেটুকতা নেই। এরা জানে, অল্প করে না দেখলে পূর্ণ পরিমাণে দেখা হয় না। জাপান-দেখা সম্বন্ধেও আমার তাই ঘটছে ; দেখবার জিনিস একেবারে হুড়মুড় করে চার দিক থেকে চোখের উপর চেপে পড়ছে, তাই প্রত্যেকটিকে স্বম্পষ্ট করে সম্পূর্ণ করে দেখা এখন আর সম্ভব হয় না। এখন, কিছু রেগে কিছু বাদ দিয়ে চলতে হবে । এখানে এসেই আদর অভ্যর্থনার সাইক্লোনের মধ্যে পড়ে গেছি ; সেই সঙ্গে খবরের কাগজের চরের চারি দিকে তুফান লাগিয়ে দিয়েছে। এদের ফাক দিয়ে যে জাপানের আর কিছু দেখব, এমন আশা ছিল না। জাহাজে এরা ছেকে ধরে, রাস্তায় এর সঙ্গে সঙ্গে চলে, ঘরের মধ্যে এরা ঢুকে পড়তে সংকোচ করে না । r এই কৌতুহলীর ভিড় ঠেলতে ঠেলতে, অবশেষে টোকিও শহরে এসে পৌছনো গেল। এখানে আমাদের চিত্রকর বন্ধু য়োকোয়াম টাইকনের বাড়িতে এসে আশ্রয় পেলুম। এখন থেকে ক্রমে জাপানের অস্তরের পরিচয় পেতে আরম্ভ করা গেল । প্রথমেই জুতো জোড়াটাকে বাড়ির দরজার কাছে ত্যাগ করতে হল। বুঝলুম, জুতো জোড়াটা রাস্তার, পা জিনিসটাই ঘরের। ধুলো জিনিসটাও দেখলুম এদের ঘরের নয়, সেটা বাইরের পৃথিবীর । বাড়ির ভিতরকার সমস্ত ঘর এবং পথ মাদুর