পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లి38 রবীন্দ্র-রচনাবলী অধিকার ক’রে ; চারি পাশে কোথাও চিত্তবিক্ষেপ করবার মতো কিছুই নেই। রিক্ততার আকাশে তার সমস্ত অর্থটি জ্যোতির্ময় হয়ে প্রকাশ পায়। ঘরে যদি নানা জিনিস ভিড় করত তবে তাদের মধ্যে এই ছবি থাকত একটি আসবাবমাত্র হয়ে, তার ছবির মাহাত্ম্য মান হত, সে আপনার সব কথা বলতে পারত না । কাব্য সংগীত প্রভৃতি অন্ত-সমস্ত রসস্থষ্টিও এইরকম বস্তুবাহুল্যবিরল রিক্ততার অপেক্ষ রাখে। তাদের চারি দিকে যদি অবকাশ না থাকে তা হলে সম্পূর্ণ মূতিতে তাদের দেখা যায় না । আজকালকার দিনে সেই অবকাশ নেই, তাই এখনকার লোকে সাহিত্য বা কলাস্থষ্টির সম্পূর্ণতা থেকে বঞ্চিত। তারা রস চায় না, মদ চায় ; আনন্দ চায় না, আমোদ চায়। চিত্তের জাগরণটা তাদের কাছে শূন্ত, তার চায় চমকলাগা । ভিড়ের ঠেলাঠেলির মধ্যে অন্যমনস্কের মন যদি কাব্যকে গানকে পেতে হয় তা হলে তার খুব আড়ম্বরের ঘটা করা দরকার। কিন্তু, সে আড়ম্বরে শ্রোতার কানটাকেই পাওয়া যায় মাত্র, ভিতরের রসের কথাটা আরো বেশি করে ঢাকাই পড়ে। কারণ, সরলতা স্বচ্ছতা আর্টের যথার্থ আভরণ । যেখানে কোলাহল বেশি, ভিড় বৃহৎ, মন নানা-কিছুতে বিক্ষিপ্ত, আর্ট সেখানে কসরত দেখাবার প্রলোভনে মজে, আপনাকে দেখাতে ভুলে যায়। আড়ম্বর জিনিসটা একটা চীৎকার ; যেখানে গোলমালের অস্ত নেই সেখানে তাকে গোচর হয়ে ওঠবার জন্তে চীৎকার করতে হয় ; সেই চীৎকারটাকেই ভিড়ের লোক শক্তির লক্ষণ জেনে পুলকিত হয়ে ওঠে। কিন্তু, আর্ট তো চীৎকার নয়, তার গভীরতম পরিচয় হচ্ছে তার আত্মসংবরণে। আর্ট বরঞ্চ ঠেলা খেয়ে চুপ করে যেতে রাজি আছে, কিন্তু ঠেলা মেরে পালোয়ানি করার মতো লজ্জা তার আর নেই। হায় রে লোকের মন, তোমাকে খুশি করবার জন্যে রামচন্দ্র একদিন সীতাকে বিসর্জন দিয়েছিলেন ; তোমাকে ভোলাবার জন্যেই আর্ট আজ আপনার শ্রী ও স্ত্রী বিসর্জন দিয়ে নৃত্য ভুলে পায়তারা মেরে বেড়াচ্ছে । হারুনা-মারু জাহাজ ৩রা অক্টোবর ১৯২৪ এখনো স্বর্য ওঠে নি। আলোকের অবতরণিক পূর্ব আকাশে। জল স্থির হয়ে আছে সিংহবাহিনীর পায়ের তলাকার সিংহের মতো । সূর্যোদয়ের এই আগমনীর মধ্যে মজে গিয়ে আমার মুখে হঠাৎ ছন্দে-গাথা এই কথাটা আপনিই ভেসে छेठंज হে ধরণী, কেন প্রতিদিন তৃপ্তিহীন একই লিপি পড় বারে বারে ।