পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

+ • లీStు রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি মায়। বল তো দোষ নেই, কেননা, এই চিঠিলিখনের অক্ষরে আবছায়, ভাষায় ইশারা ; এর আবির্ভাব-তিরোভাবের পুরো মানে সব সময়ে বোঝা যায় না। যাকে চোখে দেখা যায় না সেই উত্তাপ কখন আকাশপথ থেকে মাটির আড়ালে চলে যায় ; মনে ভাবি, একেবারেই গেল বুঝি। কিছু কাল স্থায়, একদিন দেখি, মাটির পর্দ ফাক করে দিয়ে একটি অঙ্কুর উপরের দিকে কোন এক আর জন্মের চুেনা-মূৰ খুঁজছে। ষে উত্তাপটা ফেরার হয়েছে বলে সেদিন রব উঠল সেই তো মাটির তলার অন্ধকারে সেধিয়ে কোন ঘুমিয়ে-পড়া বীজের দরজায় বসে বসে ঘা দিচ্ছিল। এমনি করেই কত অদৃশ্য ইশারার উত্তাপ এক-হৃদয়ের থেকে আর-এক হৃদয়ের ফাকে ফঁাকে কোন চোরকোঠায় গিয়ে ঢোকে, সেখানে কার সঙ্গে কী কানাকানি করে জানি নে, তার পরে কিছুদিন বাদে একটি নলীন বাণী পর্দার বাইরে এসে বলে “এসেছি”। আমার সহযাত্ৰী ৰন্ধু আমার ডায়ারি পড়ে বললেন, “তুমি ধরণীর চিঠি-পড়ায় আর মামুষের চিঠি-পড়ায় মিশিয়ে দিয়ে একটা ষেন কী গোল পাকিয়েছ। কালিদাসের মেঘদূতে বিরহী-বিরহিণীর বেদনাটা বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । তোমার এই লেখায় কোনখানে রূপক কোনখানে সাদা কথা বোঝা শক্ত হয়ে উঠেছে।” আমি বললুম, কালিদাস ষে মেঘদূত কাব্য লিখেছেন সেটাও বিশ্বের কথা। নইলে তার একপ্রান্তে নির্বাসিত যক্ষ রামগিরিতে, আর-একপ্রাস্তে বিরহিণী কেন অলকাপুরীতে। স্বর্গমর্তের এই বিরহই তো সকল স্বষ্টিতে। এই মন্দাক্রান্তাছন্দেই তো বিশ্বের গান বেজে উঠছে। বিচ্ছেদের ফাকের ভিতর দিয়ে অণু-পরমাণু নিত্যই যে অদৃশু চিঠি চালাচালি করে সেই চিঠিই স্বাক্টর বাণী। স্ত্রীপুরুষের মাঝখানেও, চোখে চোখেই হোক, কানে কানেই হোক, মনে মনেই হোক, আর কাগজে-পত্রেই হোক, যে চিঠি চলে সেও ওই বিশ্বচিঠিরই একটি বিশেষ রূপ । ৫ই অক্টোবর ১৯২৪ মানুষের আয়ুতে ষাটের কোঠা অস্তদিগস্তের দিকে হেলে-পড়া। অর্থাৎ, উদয়ের দিগন্তটা এই সময়ে সামনে এসে পড়ে, পূর্বে পশ্চিমে মুখোমুখি হয়। O জীবনের মাঝমহলে, যে কালটাকে বলে পরিণত বয়স, যেই সময়ে অনেক বড়ে বড়ো সংকল্প, অনেক কঠিন সাধনা অনেক মন্ত লাভ, অনেক মস্ত লোকসান এসে জমেছিল। সব জড়িয়ে ভেবেছি, এইবার আসা গেল পাক-পরিচয়ের কিনারাটাতে। সেই সময়ে কেউ যদি হঠাৎ এসে জিজ্ঞাসা করত “তোমার বয়স কত ।” তা হলে আমার গোড়ার দিকের ছত্রিশটা বছর সরিয়ে রেখে বলতুম, আমি হচ্ছি বাকিটুকু। অর্থাৎ,