পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sos রবীন্দ্র-রচনাবলী তুলতে হয়।. যতদিন ধরে এক পক্ষে আমার কাজের রোকড় খুব মোটা হয়ে উঠছে ততদিন ধরেই অন্তপক্ষে আমার ছুটির নথিভ অসম্ভব-রকম ভারী হয়ে উঠল। এই ৰে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে, এটা আমার অস্তরের খাস-কামরায় । আমি আসলে কোন পক্ষের, সেইটের বিচার নিয়ে আমারই কাছে নালিশ। . তার পরে কথাটা এই যে, ওই শিশু ভোলানাথ-এর কবিতাগুলো খামক কেন লিখতে বসেছিলুম। সেও লোকরঞ্জনের জন্তে নয়, নিতান্ত নিজের গরজে । , পূর্বেই বলেছি, কিছুকাল আমেরিকার প্রৌঢ়তার মরুপারে ঘোরতর কার্যপটুতার পাথরের ছর্গে আটকা পড়েছিলুম। সেদিন খুব স্পষ্ট বুঝেছিলুম, জমিয়ে তোলবার মতো এত বড়ো মিথ্যে ব্যাপার জগতে আর কিছুই নেই। এই জমাবার জমাদারটা বিশ্বের চিরচঞ্চলতাকে বাধা দেবার স্পর্ধা করে ; কিন্তু কিছুই থাকবে না, আজ বাদে কাল সব সাফ হয়ে যাবে। যে স্রোতের ঘূর্ণিপাকে এক-এক জায়গায় এই-সব বস্তুর পিওগুলোকে স্তৃপাকার করে দিয়ে গেছে সেই স্রোতেরই অবিরত বেগে ঠেলে ঠেলে সমস্ত ভাসিয়ে নীল সমুদ্রে নিয়ে যাবে— পৃথিবীর বক্ষ সুস্থ হবে। পৃথিবীতে স্বাক্টর যে লীলাশক্তি আছে সে ষে নির্লোভ, সে নিরাসক্ত, সে অকৃপণ ; সে কিছু জমতে দেয় না, কেননা, জমার জঞ্জালে তার স্বাক্টর পথ আটকায় ; সে যে নিত্যনূতনের নিরস্তর প্রকাশের জন্যে তার অবকাশকে নির্মল করে রেখে দিতে চায়। লোভী মানুষ কোথা থেকে জঞ্জাল জড়ো ক’রে সেইগুলোকে আগলে রাখবার জন্তে নিগড়বদ্ধ লক্ষ লক্ষ দাসকে দিয়ে প্রকাও সব ভাণ্ডার তৈরি করে তুলছে। সেই ধ্বংসশাপগ্রন্ত ভাওরের কারাগারে জড়বস্তুপুঞ্জের অন্ধকারে বাসা বেঁধে সঞ্চয়গর্বের ঔদ্ধত্যে মহাকালকে কৃপণটা বিন্দ্রপ করছে ; এ বিদ্রুপ মহাকাল কখনোই সইবে না। আকাশের উপর দিয়ে যেমন-ধুলানিবিড় আঁধি ক্ষণকালের জন্তে স্বর্যকে পরাভূত করে দিয়ে তার পরে নিজের দৌরাত্ম্যের কোনো চিহ্ন না রেখে চলে যায়, এসব তেমনি করেই শূন্তের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে । কিছুকালের জন্তে আমি এই বস্তু-উদগারের অন্ধষন্ত্রের মুখে এই বস্তুসঞ্চয়ের অন্ধভাণ্ডারে বন্ধ হয়ে আতিথ্যহীন সন্দেহের বিষবাম্পে শ্বাসরুদ্ধপ্রায় অবস্থায় কাটিয়েছিলুম। তখন আমি এই ঘন দেয়ালের বাইরের রাস্তা থেকে চিরপথিকের পায়ের শব্দ শুনতে পেতুম। সেই শব্দের ছন্দই যে আমার রক্তের মধ্যে বাজে, আমার ধ্যানের মধ্যে ধ্বনিত হয় । আমি সেদিন স্পষ্ট বুঝেছিলুম, আমি ওই পথিকের সহচর। আমেরিকার বড়গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসেই শিশু ভোলানাথ লিখতে বলেছিলুম। বী যেমন ফাক পেলেই ছুটে আসে সমূত্রের ধারে হাওয়া খেতে, তেমনি করে।