পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

योो 833 তুলনায় অনেক পরিমাণে অবকাশ দিয়েছে। সেই অবকাশটাকে নষ্ট করলেই তার সবচেয়ে ফাকি । পুরুষ সেই অবকাশকে আপন সাধনার ক্ষেত্র করেছে বলেই মানুষের উৎকর্ষ জৈব প্রকৃতির সীমানা অনেক দূরে ছাড়িয়ে গেল। প্রকৃতির দাবি থেকে মুক্তি নিয়েই পুরুষ জ্ঞানকে ধ্যানকে শক্তিকে অসীমের মধ্যে অনুসরণ করে চলছে। সেইজন্তে পুরুষের সাধনায় চিরকালই প্রকৃতির সঙ্গে বিরুদ্ধতা আছে। নারীর প্রেম যেখানে এই বিরোধের সমন্বয় করে দেয়, কঠোর জ্ঞানের বেদিপ্রাঙ্গণে সে যখন পূজামাধুর্যের আসন রচনা করে— পুরুষের মুক্তিকে যখন সে লুপ্ত করে না, তাকে স্বন্দর করে তোলে— তার পথকে অবরুদ্ধ করে না, পথের পাথের জুগিয়ে দেয়— ভোগবতীর জলে ডুবিয়ে দেয় না, স্বরধুনীর জলে স্বান করায়— তখন বৈরাগ্যের সঙ্গে অকুরাগের, হরের সঙ্গে পার্বতীর, শুভপরিণয় সার্থক হয়। ոնի বিচ্ছেদের ভিতর দিয়েই শক্তি কাজ করবার ক্ষেত্র পায়। চাদ ও পৃথিবীর মাঝথানে ষে-বিরহ আছে তারই অবকাশে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রকে চাদ কথা কওয়ায় । স্ত্রীপুরুষের পরস্পরের মাঝে বিধাতা একটি দূরত্ব রেখে দিয়েছেন। এই দূরত্বের ফাকটাই কেবলই সেবায় ক্ষমায় বীর্ষে সৌন্দর্ষে কল্যাণে ভরে ওঠে ; এইখানেই সীমায় অসীমে শুভদৃষ্টি । জৈবক্ষেত্রে প্রকৃতির অধিকারের মধ্যে মানুষের অনেক স্বষ্টি আছে, কিন্তু চিত্তক্ষেত্রে তার স্বাক্টর অস্ত নেই। চিত্তের মহাকাশ স্কুল আসক্তির দ্বারা জমাট হয়ে না গেলে তবেই সেই স্বষ্টির কাজ সহজ হয়। দীপশিখাকে দুই হাতে অঁাকড়ে ধরে যে-মাতাল বেশি করে পেতে চায়, সে নিজেও পোড়ে, আলোটিকেও নিবিয়ে দেয় । মুক্ত অবকাশের মধ্যে পুরুষ মুক্তিসাধনার ষে-মন্দির বহুদিনের তপস্তায় গেথে তুলেছে পূজারিনী নারী সেইখানে প্রেমের প্রদীপ জালবার ভার পেল। সে-কথা যদি সে ভুলে যায়, দেবতার নৈবেদ্যকে যদি সে মাংসের হাটে বেচতে কুষ্ঠিত না হয়, তা হলে মর্তের মর্মস্থানে ষে-অমরাবতী আছে তার পরাভব ঘটে ; পুরুষ ষায় প্রমত্ততার রসাতলে, আর নারীর হৃদয়ে ষে রসের পাত্র আছে তা ভেঙে গিয়ে সে-রস ধুলাকে পঙ্কিল করে । ক্রাকোভিয়া ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ ফুলের মধ্যে যে-আনন্দ সে প্রধানত ফলের প্রত্যাশার আনন্দ, এটা অত্যন্ত মোটা কথা । বিশ্বস্থষ্টিতে দেখতে পাই স্বটিতেই আনন্দ, হওয়াটাই চরম কথা। তার ফুলেও আছে হওয়া, ফলেও আছে হওয়া। ফুলটা হল উপায় আর ফলটা হল উদ্বেগু, তাই বলে উভয়ের মধ্যে মূল্যের কোনো ভেদ দেখতে পাই নে।