পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 88S করবার এদের শক্তি আছে তবুও এর কালো বাষ্পমাত্র, কাঞ্চনজঙ্ঘার ধ্রুব শুভ্ৰ মহত্বকে এরা অতিক্রম করতে পারে না। আর যাই হোক, হিমালয়কে এই কুয়াশার দ্বারা তিরষ্কৃত দেখে ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে মূঢ়ত হত। ক্ষণকালের মায়ার দ্বারা চিরকালের স্বরূপকে প্রচ্ছন্ন করে দেখাই আর্টিস্টের দেখা, এ কথা মানতে পারি নে। তা ছাড়া, গোকির আর্টিস্ট-চিত্ত তো বৈজ্ঞানিক হিসাবে নিবিকার নয়। র্তার চিত্তে টলস্টয়ের যে-ছায়া পড়েছে সেটা একটা ছবি হতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক হিসাবেও সেটা-যে সত্য তা কেমন করে বলব। গোকির টলস্টয়ই কি টলস্টয়। বহুকালের ও বহু লোকের চিত্তকে যদি গোকি নিজের চিত্তের মধ্যে সংহত করতে পারতেন তা হলেই র্তার দ্বারা বহুকালের ও বহুলোকের টলস্টয়ের ছবি আঁকা সম্ভবপর হত। তার মধ্যে অনেক ভোলবার সামগ্ৰী ভুলে যাওয়া হত ; আর তবেই যা না-ভোলবার তা বড়ো হয়ে, সম্পূর্ণ হয়ে, দেখা দিত। 年 জাহাজ ক্রকোভিয়া । ৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ মানুষের মধ্যে মন প্রাণ দেহ এই তিনে মিলে কাজ চালায়, এই তিনের আপসে আমাদের কর্মবেগের একটা ছন্দ তৈরি করে। শীতের দেশে দেহ সহজেই ছুটে চলতে চায় ; তারই সঙ্গে তাল রাখবার জন্যে মনেরও তাড়াতাড়ি ভাবা দরকার। গরম দেশে আমরা ধীরে সুস্থে চলি, ধীরে স্বন্থে ভাবি, কোনো বিষয়ে মন স্থির করতে বিলম্ব ঘটে । শীতের দেশে যে-তেজকে দেহের মধ্যেই জাগিয়ে তুলতে হয় গরম দেশে সেই তেজ দেহের বাইরে ; সেই আকাশব্যাপী তেজ শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ; সেইজন্তে আভ্যন্তরিক উত্তেজনা যাতে বেড়ে না ওঠে আমাদের শরীরের সেই অভিপ্রায় । চলাফেরার দম সর্বদাই তাকে কমিয়ে রাখতে হয় ; তাই আমাদের মনের মধ্যে কর্মচিস্তার ছন্দ মন্দাক্রাস্তা । মনের ভাবনা ও হুকুমের অপেক্ষায় যখন দেহকে কাজ চালাবার জন্তে পথ চেয়ে থাকতে হয় না তখন তাকেই বলে অভ্যাস, সেই অভ্যাসেই নৈপুণ্য। কর্মের তাল যতই দ্রুত হয়, দেহের পক্ষে ততই দ্বিধাবিহীন হওয়া দরকার। ভাবতে মনের যে-সময় লাগে তার জন্তে সবুর করতে গেলেই দ্বিধা ঘটে। বাহিরে কর্মের ফল সেই সবুরের জন্তে যদি অপেক্ষা করতে না পারে তা হলেই বিভ্ৰাট। মোটরগাড়ির একটা বিশেষ বেগ আছে, কখন তার হাল বায়ে ফেরাব, কখন ডাইনে, তা ঠিক করতে হলে সেই কলের বেগের দ্রুত ছন্দেই ঠিক করতে হয়, নইলে বিপদ ঘটে। সেই দ্রুততা বারবার অভ্যাসের জোরেই সহজ হয়। অভ্যাসের বাহিরে কোনো নূতন অবস্থা এসে