পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88b- রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন আমাদের ছাদের উপর দিয়ে গয়লাপাড়ার দৃপ্ত প্রতিদিনই দেখেছি ; প্রতিদিনই তা সম্পূর্ণ চোখে পড়েছে, প্রতিদিনই তা ছবি ছিল। আমার দৃষ্টি আর আমার দৃষ্টির বিষয়ের মাঝখানে কোনো ভাবনা, অভ্যাসের কোনো জীর্ণত আড়াল করে নি। আজ সেই গোয়ালপাড়া কতকটা তেমনি করে দেখতে হলে সুইজল্যাণ্ডে যেতে হয়। সেখানে মন ভালো করে স্বীকার করে, ই, আছে । শিশুর কাছে বিশ্ব খুব করে আছে, আমরা বয়স্কের সে-কথা ভুলে যাই । এইজন্তে, শিশুকে কোনো ডিসিপ্লিনের ছাচে ঢালবার জন্যে যখন তাকে জগৎ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের নিজের বানানো কলের মধ্যে বন্ধ করি তখন তাকে যে কতখানি বঞ্চিত করি তা নিজের অভ্যাসদোষেই বুঝতে পারি নে। বিশ্বের প্রতি তার এই একান্ত স্বাভাবিক ঔংস্থক্যের ভিতর দিয়েই ষে তাকে শিক্ষা দিতে হবে, নিতান্ত গোয়ারের মতো সে-কথা আমরা মানি নে। তার ঔৎসুক্যের আলো নিবিয়ে তার মনটা অন্ধকার করে দিয়ে শিক্ষার জন্যে তাকে এডুকেশন-জেলখানার দারোগার হাতে সমর্পণ করে দেওয়াই আমরা পন্থা বলে জেনেছি। বিশ্বের সঙ্গে মানুষের মনের ষে স্বাভাবিক সম্বন্ধ এই উপায়ে সেটাকে কঠোর শাসনে শিশুকাল থেকেই নষ্ট ও বিকৃত করে দিই।. ছবি বলতে আমি কী বুঝি সেই কথাটাই আর্টিস্টকে খোলসা করে বলতে চাই। মোহের কুয়াশায়, অভ্যাসের আবরণে, সমস্ত মন দিয়ে জগৎটাকে “আছে” বলে অভ্যর্থনা করে নেবার আমরা না পাই অবকাশ, না পাই শক্তি। সেইজন্য জীবনের অধিকাংশ সময়ই আমরা নিখিলকে পাশ কাটিয়েই চলেছি। সত্তার বিশুদ্ধ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েই মারা গেলুম। ছবি, পাশ কাটিয়ে যেতে আমাদের নিষেধ করে। যদি সে জোর গলায় বলতে পারে "চেয়ে দেখো”, তা হলেই মন স্বপ্ন থেকে সত্যের মধ্যে জেগে ওঠে। কেননা, ষা আছে তাই সং ; যেখানেই সমস্ত মন দিয়ে তাকে অনুভব করি সেখানেই সত্যের ম্পর্শ পাই । 嘲 কেউ না ভেবে বসেন, যা চোখে ধরা পড়ে তাই সত্য । সত্যের ব্যাপ্তি অতীতে ভবিস্তুতে দৃশ্বে অদৃশ্বে, বাহিরে অন্তরে। আর্টস্ট সত্যের সেই পূর্ণতা ষেপরিমাণে সামনে ধরতে পারে “আছে” বলে মনের সায় সেই পরিমাণে প্রবল, সেই পরিমাণে স্থায়ী হয় ; তাতে আমাদের ঔৎসুক্য সেই পরিমাণে অক্লাস্ত, আনন্দ সেই পরিমাণে গভীর হয়ে ওঠে। আসল কথা, সত্যকে উপলব্ধির পূর্ণতার সঙ্গে সঙ্গে একটা অনুভূতি আছে, সেই অনুভূতিকেই আমরা স্বন্দরের অনুভূতি বলি। গোলাপফুলকে স্বন্দর বলি এই