পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 靜 ko 8酸● মধ্যে প্রবেশ করেন। সত্য সর্বগামী বলেই মানুষকে সকলের মধ্যে প্রবেশাধিকার দেয়। বিজ্ঞান বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে মানুষের প্রবেশপথ খুলে দিচ্ছে ; কিন্তু আজ সেই রোপে এমন একটি সত্যের অভাব ঘটেছে যাতে মাহুষের মধ্যে মাহুষের প্রবেশ অবরুদ্ধ করে। অন্তরের দিকে য়ুরোপ মানুষের পক্ষে একটা বিশ্বব্যাপী বিপদ হয়ে উঠল। এইখানে বিপদ তার নিজেরও । এই জাহাজেই একজন ফরাসি লেখকের সঙ্গে আমার আলাপ হল। তিনি আমাকে বলছিলেন, যুদ্ধের পর থেকে যুরোপের নবীন যুবকদের মধ্যে বড়ো করে একটা ভাবনা ঢুকেছে। এই কথা তারা বুঝেছে, তাদের আইডিয়ালে একটা ছিত্র দেখা দিয়েছিল ষে-ছিদ্র দিয়ে বিনাশ ঢুকতে পারলে। অর্থাৎ কোথাও তারা সত্যভ্রষ্ট হল এতদিনে সেটা ধরা পড়েছে। মানুষের জগৎ অমরাবতী, তার যা সত্য-ঐশ্বৰ্ষ তা দেশে কালে পরিমিত নয় । নিজের জন্ত নিয়ত মানুষ এই-ষে অমরলোক স্বষ্টি করছে তার মূলে আছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা করবার অসীম সাহস । কিন্তু, বড়োকে গড়বার উপকরণ মানুষের ছোটো যেই চুরি করতে শুরু করে অমনি বিপদ ঘটায়। মানুষের চাইবার অন্তহীন শক্তি যখন সংকীর্ণ পথে আপন ধারাকে প্রবাহিত করতে থাকে তখনই কূল ভাঙে, তখনই বিনাশের বস্তা দুর্দাম হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, মানুষের বিপুল চাওয়া ক্ষুদ্র-নিজের জন্তে হলে তাতেই যত অশাস্তির স্বষ্টি । যেখানে তার সাধনা সকলের জন্তে সেইখানেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা কৃতাৰ্থ হয়। এই সাধনাকেই গীতা যজ্ঞ বলেছেন ; এই যজ্ঞের দ্বারাই লোকরক্ষা । এই যজ্ঞের পুস্থ হচ্ছে নিষ্কাম কর্ম। সে-কর্ম দুর্বল হবে না, সে-কর্ম ছোটো হবে না, কিন্তু সে-কর্মের ফলকামনা যেন নিজের জন্তে না হয় । বিজ্ঞান যে বিশুদ্ধ তপস্তার প্রবর্তন করেছে সে সকল দেশের, সকল কালের, সকল মাহুষের— এই জন্তেই মানুষকে তাতে দেবতার শক্তি দিয়েছে, সকলরকম দুঃখ দৈন্ত পীড়াকে মানবলোক থেকে দূর করবার জন্তে সে অস্ত্র গড়ছে ; মানুষের অমরাবতী নির্মাণের বিশ্বকর্ম এই বিজ্ঞান । কিন্তু, এই বিজ্ঞানই কর্মের রূপে যেখানে মানুষের ফলকামনাকে অতিকায় করে তুললে সেইখানেই সে হল যমের বাহন। এই পৃথিবীতে মানুষ যদি একেবারে মরে তবে সে এই জন্তেই মরবে— সে সত্যকে জেনেছিল কিন্তু সত্যের ব্যবহার জানে নি। সে দেবতার শক্তি পেয়েছিল, দেবত্ব পায় নি। বর্তমান যুগে মানুষের মধ্যে সেই দেবতার শক্তি দেখা দিয়েছে যুরোপে। কিন্তু সেই শক্তি কি মানুষকে মারবার জন্তেই দেখা দিল। গত যুরোপের যুদ্ধে এই প্রশ্নটাই ভয়ংকর মূর্তিতে প্রকাশ পেয়েছে। যুরোপের বাইরে সর্বত্রই যুরোপ বিভীষিকা হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ