পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 8@始 এই জন্তে তার ফরমাশে যখন লিখি তখন শক্ত করে বাধানো খুব একটা সাধারণ খাতা খুলে লিখতে হয় ; সে-লেখার দাম খতিয়ে হিসেব কষ চলে। কিন্তু, মাছবের একটা বিশেষ খাতা আছে ; তার আলগা পাতা, সেটা যা-ত লেখবার জন্তে, সে লেখার দামের কথা কেউ ভাবেও না। লেখাটাই তার লক্ষ্য, কথাটা উপলক্ষ। সে-রকম লেখা চিঠিতে ভালো চলে ; আটপৌরে লেখা— তার না আছে মাথায় পাগড়ি, না আছে পায়ে জুতো । পরের কাছে পরের বা নিজের কোনো দরকার নিয়ে সে যায় না— সে ষায় যেখানে বিনা-দরকারে গেলেও জবাবদিহি নেই, যেখানে কেবলমাত্র বকে যাওয়ার জন্যেই যাওয়া-আসা। স্রোতের জলের যে-ধ্বনি সেটা তার চলারই ধ্বনি, উড়ে-চলা মৌমাছির পাখার যেমন গুঞ্জন। আমরা যেটাকে বকুনি বলি সেটাও সেই মানসিক চলে যাওয়ারই শব্দ । চিঠি হচ্ছে লেখার অক্ষরে বকে যাওয়া । এই বকে-যাওয়াটা মনের জীবনের লীলা । দেহটা কেবলমাত্র চলবার জন্তেই বিনাপ্রয়োজনে মাঝে মাঝে এক-একবার ধ" করে চলে ফিরে আসে। বাজার করবার জন্তেও নয়, সভা করবার জন্তেও নয়, নিজের চলাতেই সে নিজে আনন্দ পায় বলে । তেমনি নিজের বকুনিতেই মন জীবনধর্মের তৃপ্তি পায়। তাই বকবার অবকাশ চাই, লোক চাই। বক্তৃতার জন্তে লোক চাই অনেক, বকার জন্তে এক-আধজন। দেশে অভ্যস্ত জায়গায় থাকি নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যে, জানা অজানা লোকের ভিড়ে। নিজের সঙ্গে নিজের আলাপ করবার সময় থাকে না । সেখানে নানা লোকের সঙ্গে নানা কেজো কথা নিয়ে কারবার। সেটা কেমনতরো । যেন বাধা পুকুরের ঘাটে দশজনে জটলা করে জল ব্যবহার। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা চাতকের ধর্ম আছে ; হাওয়ায় উড়ে-আসা মেঘের বর্ষণের জন্তে সে চেয়ে থাকে একা একা । মনের আকাশে উড়ো ভাবনাগুলো সেই মেঘ– সেটা খামখেয়ালের ঝাপটা লেগে ; তার আবির্ভাব তিরোভাব সবই আকস্মিক। প্রয়োজনের তাগিদমতো তাকে বাধা-নিয়মে পাওয়া যায় না বলেই তার বিশেষ দাম ; পৃথিবী আপনারই বাধা জলকে আকাশে উড়ো জল করে দেয় ; নিজের ফসলখেতকে সরস করবার জন্তে সেই জলের দরকার। বিনা প্রয়োজনে নিজের মনকে কথা বলাবার সেই প্রয়োজন, সেটাতে মন জাপন ধারাতেই আপনাকে অভিষিক্ত করে। i জীবনযাত্রার পরিচিত ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এলে মন আজ যা-তা ভাববার সময় পেল। তাই ভেবেছি, কোনো সম্পাকি বৈঠক স্মরণ করে প্রবন্ধ আওড়াব না, চিঠি লিখব তোমাকে । অর্থাৎ, পাত পেড়ে ভোজ দেওয়া তাকে বলা চলবে না ; সে হবে 3||రిe